সুন্দরবন ডায়েরি
অনেকেই আছেন— কানের সাথে চোখের সম্পর্ক ভালো।
হরিণ শব্দে দেখতে পান— চিড়িয়াখানার বন্ধ খাঁচায় ডোরাকাটা দাগ,
অথবা সুন্দরবন ভ্রমণে দেখা সবুজের ঝোপে চঞ্চল চমক। আর বাকিদের অনেকে
হরিণ শব্দে দেখতে পান— বাঘ ছুটছে অথবা কোনো একবারের ভ্রমণে
খাওয়া মাংসের স্বাদ। এক প্রেমিক অথবা জাদুকর কবিকে জানি, যিনি—
হরিণ শব্দে 'কস্তুরি কস্তুরি' চিৎকারে জপেন— সুগন্ধী ঘরের চামড়ার চাকচিক্য...
আমার— হরিণ শব্দে মনে পড়ে এক বেরসিক স্কুল
মাস্টারকে, যিনি দন্তন্যর ভুল প্রয়োগে আমাকে বেত্রাঘাত
করেছিলেন বাঘের থাবার মতন।
দুর্গাবালা
দুর্গার দশটা হাতের সাথে দশটা কানও দরকার ছিল। দশটা হাতে যদি দশটা
লেটেস্ট চোখফোন থাকে, তারজন্য দশটা কান প্রত্যাশা করা
অযৌক্তিক নয়। দশটা চোখ এবং দশটা মুখও থাকা চাই কেননা দশটা ফোনে কথা বলবার মুখ,
ডিসপ্লে দেখবার জন্য চোখও অবশ্যই চাই। দুর্গার আর কী কী থাকা
অত্যাবশ্যক ছিল সে সম্পর্কিত ভাবনায় ইস্তফা দিয়ে নতুন চাকরির দিকে ছুটছি।
‘দু হাত সমান তালে না চলবার কারণে চাকরিটা গেল’— আজকের শীর্ষ সংবাদ। অভুক্ত রাইখো না বেশিদিন মা; চাকরি
পেলেই চরণে দিব গুড়ের প্রসাদ।
দেবী মা, তোমার কাছে আশ্রয় চাইছি বইলা দোহাতি
বালা—
একেলা রাইখা চইলা গেছে—
সব ফিরায়া দেও, গুড়ের অফারটা বলবৎ আছে।
লী বালা
প্রেমের জন্য এতটা 'কে' কবে
করেছিল শুনি—
আমার ভাই 'কাবিল' প্রেমিক
ও খুনি,
ওহে আকলিমা—
ওহে হাবিলের জোড়
সাথের পুরুষকে মরতে দেখে কেমন লেগেছিল!
তোমার ঠোঁট আমার আদর্শলিপি— প্রথম পাঠ,
তোমার বুক আমার হৃদয়— বিকাল মাঠ।
তুমি আমি পুরোটা মিলে মিহি তুচ্ছ ধুলো,
ঈশ্বরের কপাট খুলে ফেলে—
প্রেম ও ঈর্ষা ছড়াচ্ছে আমাদের ছেলেমেয়েগুলো।
ল’কাপ
আমাকে বন্দি করে রাখা হয়েছিল এক গুহার মতন ঘরে, ইলেকট্রনিক বাতির আদরে জানতাম না কখন দিন-রাত এসে চলে যায়।
নিশ্চয় দিন ও রাত খুঁজতে আসে আমাকে।
পুলিশ এবং সংবাদ সংস্থার মতো—,
মোড়ের ভিখিরি, দোকানদার আর আড্ডার দরকারে
কয়েকজন এখনো বিশ্বাসে রাখে আমারে,
কোনো একদিন ইউরোপ কিংবা আফ্রিকা থেকে নাজিল হব,
নতুন জ্ঞান বিলাবো, নিত্যনতুন যুক্তি- আমাদের
দেবে মুক্তি!
আমি এই বদ্ধ আলোকময় ঘরের নিঃসঙ্গতা চিরে বেরুবোই একদিন।
শিশু গাছ
একটা জমি ফসল চাষের বুকের মধ্যে পথ পেয়ে যায়
একটা জমি দুইটা হবার নব্য নেশায়
স্থিরতার চোখ কপালে— আগুন ধরায়
আগুন আলোয় ভাত হয়ে যায়।
পরিণয়টা, দুপুর তাপে উগড়ে গিয়ে
এক বিকেলে ছিন্ন হলো— কান্নামতন জল বেলারা
চোখ জানালার বাইরে এসে— বাষ্প হয়ে মেঘ বনে যায়
বৃষ্টি ঝরায়, বুকের মধ্যে দুঃখ লাগে
হঠাৎ আসা দমকা হাওয়ায়, বিদায় কথায়
সব ভেঙে যায়! — সব ভেঙে যায়?
ছাদ বাগানকে সঙ্গী করে প্রতিবেশির হাড়ি চুলো
জানালার পর্দাগুলো— অন্য বাড়ির সকাল হলো
বিদায় নয়— নতুন আখ্যান
বীজগুলো ঠিক মাটির তলায় এমনি করে চলে গিয়ে
শুরু করে সবুজ চারার গতির গান।
বিদায় নয়— নয় বিদায়, ঝরা
পাতারা মাটিতে হোক সার
শিকড়েরা পুষ্টি পাক, ফল ধরুক পুষ্ট গাছে
নতুন শিশু বাঁচবে বলে গাছ জীবন—হাত বাড়িয়ে আছে
কর্তৃত্বশীলা
দুইহাত পৃথিবীর দুইদিকে মেলে ধরে
বিশ্বাসী কণ্ঠ আর রক্ত মাখা শরীরে
যীশু কার গান গায়— কাকে চায়!
তুমি কি তাকেও গেছো ছেড়ে; অনাথ রোদেরে—
যেমন আদরে ঢেকে দেয় মাঝেমাঝে মেঘ আর
অশান্ত আবেগ ঝরঝর কাঁদে— তোমার প্রেমের ফাঁদে
কত যুবক কিংবা যীশু পরেছে প্রেমের শেকল-মালা,
আশ্চর্য বালা,
কণ্ঠে জিকির দিলা— ফকির বানাইলা!
ফুলবালা
তারা হাঁটে- গান গায়।
পায়ে পায়ে প্রার্থনায়- সুরে সুরে- নাচের মতন চলে
তারা শান্তির কথা বলে, তারা বকুল ফুলের মতো
ঝরবার ক্ষত ভুলে আরো বেশি সুবাস ছড়াতে চায়,
তারা হাঁটে- গান গায়- ছেড়ে চলে যায়, নিষাদ ঝড়ে
কামড় দাগের মতন কী যেন গোপন গতরে- দেয় পীড়া
তারা হাঁটে- গায়- চলে যায়; তাদের হয় না আর
ফেরা।
কিংবা ফেরা হয়, যখন থাকে না নতুন কিছুর লোভ
তখন পরাজয়, নত করে দেয় প্রাক্তন যৌবন দম্ভ।
তখনও কি মানুষ গায়- হাঁটে! নাকি স্থিরতার আরম্ভ
বকুল কোরে যারা চলে গিয়েছিল একদিন- হঠাৎ ঝড়ে,
পা আছে যে ফুলের- সুবাস গান তাঁর আশ্চর্য শরীরে!
স্তব্ধ হয়ে পড়ে ফেললাম সবটুকু। মুগ্ধ। ভাবনার ডাইমেনশন চমকে দিলো। অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও নতুন কবিতার প্রত্যাশায় রইলাম 💕
ReplyDeleteশুকরিয়া
Deleteখুব ভালো লাগলো কবিতাগুলো। কবির কবিতাযাত্রা সবসময় এমনই সমৃদ্ধ হোক। আর আমরা পাঠকরাও তা পাঠে যেন ঋদ্ধ হতে পারি
ReplyDeleteশুকরিয়া প্রিয়
Deleteবাহ্, চমৎকার।
ReplyDeleteখুব ভালো লেখা । বেশ অন্যরকম। এরকম লেখার অপেক্ষায় থাকি
ReplyDeleteশুকরিয়া
Delete