বাক্‌ ।। সমীরণ ঘোষের নির্বাচিত কবিতা

 


জাদুসন্ধ্যা

 

চমৎকার শুরুর বাক্সে তুমি বাক্যহীন কাচের টুকরো

হেসেছিলে। আমাদের প্রান্তিক জানলায় ধারালো

আলোর রঙে নেমে এল বৃষ্টিশিরীষ

তারপর কত কত যুদ্ধনগর। কত পেট্রোলগন্ধের

ঘরবাড়ি। পোড়া পাহাড়ের গায়ে ব্রাশের ঝরনা

আর বাণিজ্যতরণী গেল ক্ষুধামান্দ্যর দেশে

 

কথাহীন কাচের টুকরো পঁচিশ বিন্দুতে ফিরে গেলে

স্মৃতিহীন ফলার নিশানা তুমি আপেলবণিকের রাঁঢ়

 

জানলা থেকে যেটুকু ভাসান ততদূর ধাবমান সেতু

আর চমৎকার মৃতদেহ কোলে কেউ পদ্মাসনে বসে

 

ভাঙা দরজায় সিংভূম ফোটালে এত রুক্ষ শতক

 

 

 

আবহমান 

 

আসাযাওয়ার পথে একটা পেরেকই টেনে তুলতে

চাইলাম। যার বাস্তবিক কোনও আদলই ছিল না

 

কোনো এক সুরের দরজা অন্ধকার হয়ে গেছে বহুদূর 

কোনো এক পাল্লার আগুন নির্বিশেষ হাওয়ায় দুলছে

 

আতাগাছের নীচে দুজন মেয়ে দুরকম আতঙ্কের

পোশাকে । তারাও কী গুপ্ত শলাকার খোঁজে 

মাত্রাহীন বুড়ো হয়ে গেল

 

ফ্যাকাশে আতাগাছ অতিশয় ছবির পাঁশুটে 

দুই গ্রস্ত মেয়েকে খুঁড়ে যায় 

 

 

 

আষাঢ়সন্ধ্যা

 

কামান থেকে আর কিছুই স্পষ্ট নয়। যা আপৎকালীন শীত মনে হত। সচরাচর সাবেক বানানে তুমি 

সাবেক মেশিনে ছাঁটা ময়ূরপুঞ্জ। তামার পাঞ্জাগুলো

হাত ঘুরে যতটুকু পঙ্ ক্তিবদল

 

দিগন্তের পাশে গাঢ় বিশ্বাসের শৌর্যে জ্বলা কাশবন

যার নীচে পরম্পরার হত্যা অভিযোজনের সরু

আরও নীচে আষাঢ়সন্ধ্যায় ফুটেছিল প্রবল যকৃৎ 

 

দূরের কামান থেকে তুমি যা দেখতে পাও কপিশবর্ণের কাল। তীরে কবন্ধ মেয়েরা যত 

রান্নায় বসেছে। হাঁড়িভরতি মুণ্ডরাশি সমারোহে 

ফুটছে অকাতর

 

 

 

কেয়ামত

 

গলাকাটা স্বপ্নরা হয়তো ফিরবে

জলটুঙি। হিক্কার সূর্যাস্তে ভাঙা গান

মুঠো থেকে পিছলে যাচ্ছে সাপ

মুঠো থেকে জাদুর জঙ্গল 

বাগানবাড়ির ঘুমে লেজকাটা পাথরের 

শেয়াল ঘুরছে । জেনানাফটক ওড়ে

কোণে কোণে ছিন্ন দেহ। কোণে মৃত নগরীর হাঁপ

কাচ ও পাথরের পথ জেরুজালেম অব্দি

শূন্যে ফুটছে

 

 

 

কবিরাজি 

 

ডুবুরি ল্যাঙট খুলে মাছই ধরছে 

হেসে গড়িয়ে পড়ছে তীরে নদীর করাত

আমার ভূমিকা শুধু  দাঁড়ের মন্থর

বিভাজিকা থেকে দুই গণিতের খোলস সরাচ্ছি 

ঝিমলাগা তাল ও খেজুর। দিগন্তের ফলার নিরালা

মা দুধ দেবে। পুতুলেরা পদব্রজে এতটা এসেছে 

রাত্রির নল থেকে চাঁদের ফচকে দেখে সং

পুতুলের ভাঙা হাত ভাঙা পা মুণ্ডসমস্ত

যত্রতত্র জুড়ে দিচ্ছে বনের বায়স 

বনের আয়ুর্বেদ জানলা খুলে বিস্ময়ে গড়িয়ে

মা হাসছে। মহাবিশ্বে উথলে যাচ্ছে দুই স্তন

 

 

 

শতরঞ্জ

 

ভাঙা-হাত ভাঙা-পা ছড়িয়ে বসেছি ভাঙা যৌনপদ্মে

এইবার আলুখেতে সামান্য নিড়ানি 

হাড়গোড় নাড়িভুড়ি পাখি আর পতঙ্গের মুখে রেখে

তোমার মুণ্ডের সাথে সূর্যাস্তশূন্যে। কিঞ্চিৎ দাবায়

আমিও ল্যাংটো। তুমি ফলার মসৃণ কোপে কেটে ফেলছ স্তনের হাঁসুলি। কেটে ফেলছ পানিময়

দুতক্তার ভেলা

দিগন্ত বাঘছাল। আর ভেজা গান উসকে তুলছে 

লন্ঠনের নীল বহুরূপী। কালো ছাউনির নীচে

হাহা তণ্ডুল ফুটছে। আর অনন্তের নৈশজ্বালানি

যেটুকু রেখার পা জবার পাথুরে লাল

আলো নেই অন্ধকারও নেই

দাবার অস্থির ছক স্বভাবঘূর্ণি

ছায়াপথ অব্দি শিস ওঠে

 

 

 

বিকেল

 

ফুটে ওঠা প্রান্তিক ঘণ্টায় না-ফোটা অলীক 

কোনো চোদ্দশোশতক। না-ফোটা হিজরি থেকে

কালহীন রেণু ঝরে উল্লুকের বন

অথবা কবন্ধ হাঁস। মেঘের পিতল

মঠ ও গম্বুজ যত সাবেক ইশারার বালিয়াড়ি 

কাঁটাখয়েরের দিন। প্রান্তিক ঘণ্টায় ভেড়া 

মাংসগন্ধ। কস্মিনকালের ধোঁয়া 

অথবা ফুল্লরা। বিকেল বসাচ্ছে মেঘে হাড়ের আঙুলে

 

 

 

কেঁদুলি

 

সপাটে চেয়েছি। কিন্তু আঁচ লেগে ধাতুর বয়ান

গলে গেল। ভস্ম মেখে যেটুকু এলাম সেতুর কঙ্কাল

 

টিমটিমে অন্ধকার টিমটিমে আলোর কেঁদুলি

জঙ্গলের গর্ভে যত হাতচিঠি। পোড়া। সোঁতার মেয়েলি

আলোগলা পিতলকালের ধুন

হাঁস ফেরে। হাতিয়ার 

ঘটনা সন্ধে-কাঁধে। আধপোড়া খেলার মৈথুন

 

 

 

ব্যোম

 

লুফতে লুফতে নিজেকেই পেরিয়ে যাচ্ছি শ্রীহরিকোটাল। মোহনদাস যা বললেন

থাক মায়েপোয়ে। থাক বেড়ার পাশেই

পোষ্য বিকেলের একা তারা

 

নক্ষত্রের শস্যে বসে ব্রহ্মাণ্ডের খেতি

তাছাড়া পরশুতরশু করে কাটিয়ে দিলেই ছুটি

কে তুলবে রহস্যের পোঁতা খুঁটি। তুমিই শ্যাম

তুমিই সেগুন। সেলুনের ছুরিকাঁচি। হাতের

আহত ব্রোঞ্জ। অনেক অনেক সেতু রাক্ষসের

পায়ে মুছে গেল

 

মা বলছে ভোর ভোর যা। মা দিল চুমুর পথ

আঠাভেজা। শালের দোনাায় যাচ্ছে আস্ত ঝরনা

সঙ্গে প্রবল টাঙি। সঙ্গে গোধিকা

লুফতে লুফতে নিজেকেই। সেই যে যাচ্ছি 

কড়ায়গণ্ডায় 

 

 

 

গন্ধের দোকান

 

বাহানা করছি। যতদূর শ্রাবণ ফুটছে

তফসিল তত ছোট। স্বভাবগম্ভীর

গড়ানো সুতোর গোলা। গাওনা তুলে বার্মিটোলায়

বাঘের ডাকের থেকে বড় করে টাঙানো রোদ্দুর 

বাহানা করছি। কামানের রন্ধ্র ফুঁড়ে চোখের চাহাত

নিশানা যাচ্ছে কুয়াশার ফুলকোগুলো ভেঙে

কুয়াশার হাতা ভেঙে এ-মহা বাদর

ভোর শেলের উড়ান। পৃথিবীকে কী যে পড়াচ্ছে

ইশকাবনের মেম মস্ত এক মেঘ নিয়ে তাসের মেখলায়

জোশ। আর ফিরিঙ্গিসন্ধ্যা। কুপির আলোয় দোলা

হাট। বাঁধন যাচ্ছে। কিন্তু শূন্যে ফোটা শ্রাবণ যাচ্ছে না

 

 

 

রুমাদের বাড়ি

 

কাটা পাঞ্জা দুলে দুলে গিটার বাজাচ্ছে এক কোণে

সেই ভালো। শামুকের পিঠে বসে অনন্তঅব্দি এই

যাওয়া। গলে যাওয়া ঘড়ির পিছনে ফের 

লালচে শরৎ। গন্ধের হসপাতালসহ ফিরে আসছে

অতীতবর্ণের রুমা

 

একা ঘরে ফল-কাটা ছুরির সঙ্গে কার বোঝাপড়া

মাস্টারের ছেলে অনায়কোচিত নখ কাটছে 

সস্তা বারান্দায় 

কাটা পাঞ্জা দুলে দুলে গিটার বাজাচ্ছে

 হুক থেকে আশ্চর্যরকম ঝুলে ঘরময় রুমার আভাস

 

 

 

অপেক্ষা 

 

বরফ-শূন্য থেকে আমাদের চূর্ণভাঙা স্লেজ

কবে যে ফিরবে। বলো বলো

আমাদের তুষারদগ্ধ স্লেজ আদৌ ফিরবে

একবার বলো

 

মেরুহায়নার হাসি হিমানীজমাট। কান্তিকর

শুধুই ঝরছে। প্রেতগাছ শিস দিচ্ছে চর্বিকঠিন

সাদা ঘুমে

 

আর কোনো সম্ভাবনার রেখা তুমি কী দেখছ

এই মেরুগ্রামে

 

আমাদের স্মৃতিভ্রষ্ট স্লেজ উষ্ণগরম পায়ে

ফিরবে কী লুপ্ত নিশানায়

 

 

 

চলচ্চিত্র 

 

মেয়েরাস্তার পাশে ছেলেদের পাহাড় উঠছে

আমিও অবাক দানো। বারুদের খোল ঠেলে

পথ তুলছি গগণটোলায়

 

বুনো সন্ধের রিলে নির্বিকার আলেয়া উঠছে

ঝাঁপ দিচ্ছে কিমিতিবাদী হাঁস

শূন্যের টেবিলে ঝিম খুরি

মদের ঝুলন্ত ঠিলি

আবহসংগীতে ওড়ে মাতাল লেফাফা  

 

আমাদের চিত্রনাট্য ডিনামাইটভগ্ন

যার ঘুম থেকে তামাদিকালের ডিম

তা দিচ্ছে এলনিনো। তা দিচ্ছে 

জুরাসিকপাড়া

লম্বা খোলস থেকে লালা ঠেলে বেরুচ্ছে সময়

 

আমাদের চিত্রনাট্যের পাতা মুখে চেপে

উড়ে যাচ্ছে অগ্নিরূপসাপ

 

 

 

হাতপাখা 

 

কুমড়োলতা যে চিহ্নে দুলছে

আমাদের অন্ধকার হেলে

আমাদের বজ্রতুমুল লাউডগা সোপর্দ করছে

কাঠগড়া অন্ধ আয়না

 

আমাদের কালোরাত কুমড়োফুরের সাথে কুচ্ছিত 

ঘুমিয়ে। হাঁটুর কাপড় উড়ে কলোনির দ্বীপের প্রবাল

 

মিথ্যে বলো না। এত সাপ কখনও ফোটেনি

এত মুণ্ড, কড়ি ও পাশার দানে সন্ধেসকাল

 

আমিও ভিখিরি- বীণ গর্ভচাতক। কুড়াতে কুড়াতে

হাড়অস্থি কণ্টকের মাঝে

হাতপাখা। তোমাকে দোলাই

 

 

 

পরাকাল

 

স্বপ্ন ওই বঁটি হাতে আমাকে কাটছে

স্বপ্ন দাওলি হাতে আমাকে কাটছে 

কাঁধ থেকে ছিন্নহাত উড়ছে শূন্যে 

ওই তো প্রেমিকা। ওই আমার শ্রমণ

 

রক্ত গড়িয়ে নীচে জবাপুঞ্জের ভোর

ফিরে এস, আধভেজা ময়ূর কাঁদছে

এস এস, চিররুগ্ণ বনানী কাঁদছে 

হত্যে দিচ্ছে পইঠার হাওয়া 

 

জবাফুলে কাল বুনছে ভ্রমর। জবাফুলে

স্বরলিপি লিখছে তমসার লালা

ও প্রেমিকা,মাতৃমুখ, ত্রিশূলবেঁধা ঠোঁটে

কাটা জিভে আধপোড়া নগর আঁকছি আয়নায় 

 

ওই স্তনবিভাজিকা থেকে চমকে ওঠা গাছে

যত যাযাবর ফড়িঙের মেলা

ও রজমুগ্ধ কাপড়ের লাল

ফেরাও ফেরাও ওই ছিন্ন দুই হাত

 

 

হরফ

 

কাটা জিভ লোহাঝরা স্মৃতিকে পড়ছে 

এমনই সুরের জং

শিরশিরে। কাঁটাখয়েরের দেশ

 

স্মৃতিও পড়ছে। মৃত ঠোঁট

চোখের তামায়

 

পৃষ্ঠা হাওয়ার শব

হাপর ফোলানো কুঠিবাড়ি 

 

দালানও পড়ছে। খোনা

হরফের সান্ধ্যশিখায়

 

 

 

কাঠকয়লার বন

 

ফুলে ওঠা বাঁশি। গলে পাখির চৌরসিয়া

যেন সম্পর্ক বসছে ভাঙা রিডে 

নিষ্করুণ। চাপের ছায়ায় 

 

দোলনা বরফের। হয়তো বসেছে কেউ

মুখের জ্যামিতি ভেঙে শিখার গোধূলি 

সুরও গলছে। ফুটো থেকে রুপোর জোনাকি

আংশিক। ইথারকঠিন

 

ডানার হিজাব তুলে মুণ্ড উড়ছে। মুখে

হারানো জিভের শিস। বসতির পোড়া খুনসুটি 

পাতালসরণির ছায়া। আত্মভূমিকাহীন 

কাঠকয়লার বন

 

 

তসবি

 

পাজামা মেলে এসেছিলাম লাল গানে 

সেই অভিশাপ লুকোনো যাচ্ছে না 

 

গান ক্রমে শ্বাসের ফিসফিস 

বলছে টিপবোতাম খুলি 

বলছে জিভে জিভে পাচার হোক সিন্দুকের মণি 

 

পাঁজরে দাঁড়ের গান নক্ষত্রের তসবি গুনছে

 

 

 

অবদমন

 

গ্রামোফোনের শূন্যে কুকুরগুলোকে মেঘের

কলকব্জা ছাড়া ভাবাই যাচ্ছে না 

মাত্রাহীন আকুপাংচার কুকুরদের পিষে ফেলছে 

ডাক সিসার অকার্যকরী। কানে ঢালা 

ধাতুর সন্ত্রাস

একজন মেয়ে-দোলনা দুই বরকন্দাজ-সহ

গানকে পালিশ দিচ্ছে হাড়ের উখায়

রেকর্ড টলছে। পিন ফিসফিসে গলির গালায় 

চোং আর্তনাদের খনখনে। মাত্রাহীন 

অবদমনের লোহা 

 

 

পেনসিলের শ্রুতিধর 

 

শান্ত চিরাগ হাতে বেড়াল কী বরফের বাক্স হয়ে যাবে 

 

জানলার কাচ আর সহ্য করছে না তাই পর্দা পড়ে যায়। ঘরের হলকা নিভে সিসার দেয়াল। কোনে

বেহালার সিসা

 

পেতলের পক্ষীস্মৃতি আয়নার রুপোয় খুব স্পষ্টকঠোর। তুলোর পলকা হাঁস গোধূলি নেবাচ্ছে 

ঠোঁটে। তুলোর সুদূর 

 

মাছের অতল এসে ফালাফালা। বেড়ালের

মাথার জমাট 

 

থাবার আঙুল-সব এখনও নড়ছে 

নখে লক্ষবছরের ক্ষিদে। খুনের মরশুম 

 

 

ওই ওকগাছ। যাকে বীজ থেকে শনাক্ত করছে 

বেড়ালের ভ্রূ 

 

ফাঁসের জন্য ঠাট্টারকমের উঁচু। হাস্যকর

আহা নীচু লিচুগাছের দেশ

 

শেষের তহসিল থেকে মিথ্যেবিপুল চাঁদ। আর

কাকতাড়ুয়ার ঘুমে টুকে রাখা সোঁতা। গানের মর্মর

 

মুছে যাওয়া ওকগাছ বীজ থেকে টেনে 

তুলছে বেড়াল

 

নীচু লিচুগাছ। রশি। নীচু শ্বাসের জুবান

 

জীবন অভিনীত হচ্ছে নীচুমাত্র হাওয়ার রেখায়

 

 

রক্ত আর পুঁজরঙের ফুল। মৃত পতঙ্গেরা

গুনে গুনে রাখছে শূন্যে 

 

এই ভ্রম। নিষ্ঠুরতা। অসম্ভব কাচের বাগান

লাফ দিয়ে কামড়ে ধরছে বোবা চিত্রকল্পের টুঁটি 

 

গোধূলি সুড়ঙ্গ। থমথম ছায়ার জানাজা 

কেউ কী ফিরছে সমে। ঘুণলাগা গানের পৃষ্ঠায়

 

ফলার তরাসে এত জিভের প্রসাধন 

শিশঘর। পেটফাঁসা জেব্রা উড়ছে 

হয়তো শার্শি ফুঁড়ে পতঙ্গেরা ফিরছে গণনায় 

 

ক্ষোভের অকল্পনীয়। আঁচড়ে যাচ্ছে ভাঙা ছায়া

 

 

অসম্পূর্ণ। আর গোল। কেউ নয়। বন্দুকের 

গলে যাওয়া স্মৃতি। নলের ভগ্নাংশ কাঁধে বেড়াল

পৌছুঁচ্ছে। ফাঁপা পুথির সুড়ঙ্গ 

 

চৌকো চাওয়ার পথ চৌকো মুনিয়ার। মাটাম ফেলছে

ফুরোনো পৃষ্ঠার গান ফসফরাসের। গড়ানো বালির 

জলের বাংলা টানা শ্লেষের গোলাপি 

যোনি শ্লোকের পাথর

 

গোল আর অসম্পূর্ণ। দ্বীপের বারুদ। তামার

পোশাকে লাল লন্ঠনের দূত। শোকের পিচ্ছিল 

 

মাংসের সূর্যাস্তে দুই থাবার আর্তি 

দুই কোকিলের রেণু 

 

গোল আর অনিঃশেষ 

গলে যাওয়া করাতকলের শেষে হয়তো শেফালি

 


9 comments:

  1. অসাধারণ ভাবনা। কিছু হারিয়ে যাওয়া শব্দ ফিরে এল কবিতায়। প্রতিটি কবিতাই অনন্য । কবিকে আমার শুভেচ্ছা জানাই 💐।‌

    ReplyDelete
  2. ২০ টি কবিতা। প্রত্যেকটিই স্বতন্ত্র স্বাদ ও ভাবনার। চমৎকার লিখেছেন সমীরণ বাবু। ধন্যবাদ অনুপমকে ভালো কবিতা পড়ানোর জন্য।

    ReplyDelete
  3. সবগুলো কবিতাই ভালোলাগল। আরও পড়তে হবে বার বার

    ReplyDelete
  4. প্রিয় কবির দুর্দান্ত সব লেখা।কবি অন্য গ্যালাক্সির বাসিন্দা।

    ReplyDelete
  5. অসাধারণ সব কবিতা। বিশেষ করে উল্লেখ করতে চাই —অবদমন, হরফ, চলচ্চিত্র।

    ReplyDelete
  6. সু ন দ র

    ReplyDelete
  7. সমীরণদার কবিতা আমি ধারাবাহিকভাবে পড়িনি। আগে দু'একটা কবিতা পত্র-পত্রিকায় পড়েছি। কোনো কবিকে পড়তে হলে তাকে ধারাবাহিকভাবে পড়াটা জরুরি। তার টাল-মাটাল, তাঁর কোণ-কৌণিক, ভাষাপ্রকরণ তবেই ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়। এখানে 'বাক' সেই সুযোগ করে দিল। পড়লাম। সমীরণদার কবিতা একপাঠের কবিতা নয়। ভাষা ব্যবহার ও ভাষার সম্ভাবনা ভাবের তরীতে চেপে কতদূর ক্রিয়াশীল তা সমীরণদা যেন যাচাই করেন। কবিতার দেহে বাক্যগুলি মনে হচ্ছে কোনো পূর্বাপর কার্যকারণ থেকে আসছে না, তা্রা যেন ভাবের এক একটা একক। এক একটি ইউনিট। কোথাও যেন তা এক অন্তর্লীন ভাবটিকে সঙ্গে নিয়ে চলছে। কবিতা এভাবেই দেহ পাচ্ছে। কিছু কিছু ব্যবহার চমৎকারা। সমীরণদার কবিতা গাঠনিক এক কেওসের লজিক। বা না -যুক্তির খসড়া। তার অর্থ এই নয় যে তা কেবল শুষ্ক। বরং অন্যরকম এক লগ্নতার প্রশ্বাস। চলাচল।

    কবিতাগুলির কাছে আবারও ফিরে আসতে হয়।

    ReplyDelete
  8. অসম্ভব ব্যাপ্তি ! আকাশ করা! নিবিড় ও অনাদি ! চমৎকার !

    ReplyDelete
  9. অন্তরের তাগিদ থেকে বেরিয়ে আসা একেকটা উচ্চারণ। চাবুকের মত। আত্মপীড়ন ও তার একেকটি ঝাপটা, গায়ে এসে লাগে। অপূর্ব। আবার পড়ব। বারবার পড়তে হবে ❤️

    ReplyDelete