১
সিংহ গর্জন করছে
🌱
সিংহ গর্জন করছে শুধু —
আমরা নিজের ভেতর
নিজেই লুকিয়ে আছি ।
হাত বাড়াচ্ছি না —
গলাখাকারি দিচ্ছি না —
যদিও ভয় পাচ্ছি
উদ্ধারের আবেদন জানাচ্ছি না ।
এখন দিন না রাত
সূর্য উঠেছে না মেঘলা
কিছুই বোঝা যাচ্ছে না !
ঘাড়ের কাছে নিঃশ্বাস পড়ছে কার ?
চেঁচিয়ে জিজ্ঞেস করতে পারছি না
সে আমার আপনজন কিনা !
২
ফোড়ন
🌱
কার ভেতর কে জন্ম নেবে
পাড়াপ্রতিবেশী আর গোপন ধর্ষক
জানে না সেসব কাহিনি
শুধু মাছ শুকনো হচ্ছে বলে
গন্ধ পাচ্ছে সবাই
অন্ধকার বুট পরে যাচ্ছে জ্যোৎস্নার কাছে
জ্যোৎস্নার সঙ্গে ওর কী কথা আছে ?
বার্তা তবু ছুটে যাচ্ছে এই বাংলাদেশে
একুশ ফেব্রুয়ারি এসে রঙ লাগাচ্ছে পলাশে
সংযম খুলে দিচ্ছে অসংযমকে তার বুক
মরা হোক জ্যান্ত হোক বিমর্ষ কিংবা উৎসুক
দাঁড়িপাল্লায় চেপে হাঁস যাবে পিকনিকে
রন্ধন প্রণালী বুঝে রান্না হবে লঘু গুরু পাকে
যার যা মরশুম সে-ই তা বোঝে
কার কাছে কে ঘুমাবে ঠিক নেয় খুঁজে
বুঝুক জানালা সব বন্ধ না খোলা
যার সাধ্য তারই বাদ্য
জল শুধু হয়ে যাচ্ছে ঘোলা ।
৩
মহাসঙ্গম যাত্রা
🌱
স্রোতকে খরস্রোতে পরিণত করতে
আমরা
দুজনেই ঢেউ তুলছি ।
আমাদের নৌকা
এগিয়ে যাক
অনুকূলে
মহাসঙ্গমে
অস্থির প্রচেত
কত দৃশ্য রচনা করছে
মহাকালের বাল্মীকি
উচ্চারণ করছে
কত স্তব স্তুতি
শুনতে শুনতে
আমাদের সংসারেও
প্লাবন আসছে
ছোট্ট সংসার
অনন্তের ইচ্ছার বাঁশিতে
বেজে উঠছে
হাঃ হাঃ
আমাদের হাসির
পাশে কোনো বিস্ময়চিহ্ন নেই
ঝকঝকে জলের
ঊরুর মসৃণ আভা
সৃষ্টিতত্ত্বের
সংকেতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছে
আমরা স্পন্দিত
হচ্ছি মহাসঙ্গমের পূর্বমুহূর্তের একান্ত আলাপে
৪
রূপজল
🌱
সমস্ত ছায়ার গাছে বিষণ্ণ পাতারা
ঝরে যায়
পাতাদের কুড়িয়ে নিই
পাতাদের কুড়িয়ে
ঘরে রাখি
এই নীলবর্ণ দিনে
আমাদের মরা ঘুম ওড়ে
ঘুমও বিষণ্ণ কোনো পাখি
রোদ নেই বলে
রোদের
ভাষাও মানুষ বোঝেনি
হ্রদে হ্রদে হাসে
রূপজল
রূপজলে ভেসে যায়
আমাদের হাঁস
সঙ্গমের ইচ্ছায়
তাদের আর ডাকি নাকো কাছে
পালতোলা নৌকার মতো সভ্যতার রমণীরা দূরে চলে গেলে
পরস্পর আমরা বলে যাই রাতের কাহিনি
আজ শুধু দাঁড়কাক
আমাদের কাকের কণ্ঠস্বর
৫
ফিরছি আবার
🌱
পাখির খুশিতে হাসছে নতুন দিন
বিষাদকে আজ কোথায় পাঠাব, বকুল?
দিগন্ত জুড়ে তারার নষ্ট ফুল
উড়ছে হাওয়ায়
হাসপাতাল আজ ছুটি দিয়েছে
রক্তবমির পর আজই প্রথম
আলো বাতাসে খুঁজেছি আমার ঘর
মাদুর পেতে বলেছে মাটিতে —
একটু বসে যাও!
এত দহনের পর
গ্লাসে গ্লাসে ঠাণ্ডা জল
আহা জলও রাধা
নাচে রাধা জল
আমার লুকোনো বীণাটি বেজে ওঠে তবে
বকুল, তুমি ফুটে ওঠো দেখি
আমার হৃদয় আজ নতুন কিশলয়।
৬
নতুন ধারণার নাম সক্রেটিস
🌱
১
নতুন ধারণার জন্ম দিতে হইবে
কল্পনা নাম্নী এক সুন্দরীকে লইয়া ঘর ছাড়িয়াছি
রাত্রির উন্মুক্ত
তাঁবুর ভিতর আমাদের বাসর যাপন চলিতেছে
২
নক্ষত্রমণ্ডলী হাসিতেছে
রাত্রির নশ্বরেরা যাতায়াত করিতেছে
বাতাস তাহার বাতাসীকে ডাকিতেছে
সভ্যতা অসভ্যতাকে দেহ সমর্পণ করিতেছে
ধর্ম উলঙ্গ হইয়া অধর্মের ঘর করিতেছে
৩
ইতিমধ্যে আমাদের নতুন ধারণা জন্মাইল
উহাকে কাংস্যবর্ণ ইচ্ছা খাইতে দিলাম
সে কাঁদিয়া উঠিল
স্বপনের বাতাসা আনাইলাম
সে খাইল না
৪
দেখিতে দেখিতে সে সক্রেটিস হইল
মহারাত্রির আলোয় দাঁড়াইয়া
যুগপ্লাবনের ঘুম ভাঙাইবার কথা বলিতে লাগিল
আমরা তাহার জন্য বিষ লইয়া অপেক্ষা করিতে লাগিলাম
৭
সন্তান
🌱
নিজেকে নিজের সন্তান ভেবে
চকোলেট কিনে দিই
ভিড় রাস্তায় হাত ধরে পার করে দিই
সংকটে বোঝাই
তবু স্টেশনে এসে উদাসীন
দৃষ্টি চলে যায় দূরে
আমিই তাড়া দিয়ে বলি
সময় নেই ! সময় নেই !
সব সময় চলে যাচ্ছে ট্রেনে চড়ে...
৮
একটি জন্মের বারান্দায়
🌱
একটি জন্মের বারান্দায়
কতক্ষণ অপেক্ষা করব উদ্বেগ?
আর্তনাদ ছুটে আসছে
রক্তবনের ভেজা হলুদ চাঁদ
নেমেছে মাটিতে
এইখানে একটি হাতললাগা চেয়ার
আমাকে বসিয়ে রাখে দিনরাত
আমি কি জরার বন্ধু?
মৃত্যুর সংবাদ?
নিজস্ব মুখের দিকে চেয়ে আছি
বার্ধক্যের কুমারী এসে চা দেয়
আমি তার কাঁপা কাঁপা হাতে
ছুঁয়ে দেখি আমাদের গার্হস্থ্য বিষাদ
৯
কৌণিক বিন্দু
🌱
চোখ সরিয়ে নিলেও হাওয়া ঘুরবে
অজস্র শব্দে বন্ বন্ করে
ফিরে আসবে সাংঘাতিক প্রমা
উপমাহীন কোনও কিছু হয়?
তবুও কৌণিক বিন্দু বাহু প্রার্থনা করে
বাহুতে বাহুতে মাংস , লোমকূপ
স্পর্শ ও ইশারা চায়
সীমানার ভেতর সারারাত রতির বিলাপ
আর সামাজিক প্রচ্ছদের নীচে
নিষিদ্ধ সূচিপত্র
অদ্ভুত খেলা তার
১০
মমি
🌱
প্রাচীন কবর থেকে উঠে দাঁড়াচ্ছি
মেমোরিজ প্রদীপ জ্বেলে দিলে
হাতে হাতে বাঁশি বেজে ওঠে
আবার প্যানডেমোনিয়ামের
দিন ফিরে আসে
লুকিং ফরগেট হেসে ওঠে
পৃথিবীর আদিম মোড়ক খুলে
সেই নিষিদ্ধ ফল
ফিরছে গন্ধরাজ
লোকোসিয়াসের দল
এরই মাঝে ঈশ্বর
বিরহ বিধুরা কামিনী
দাড়িবাজ ধূর্ত শৃগাল
আত্মাদের লুমিং করে দেয় বারবার
একবিংশ শতাব্দী আজ প্রাচীন কবর
শতাব্দীর প্রেতছায়া পিরামিড...
১১
সুদেব বক্সীর বিনিদ্র ময়ূর
🌱
শূন্য ঝুলে থাকে ইতিহাসে
ক্যালিফোর্নিয়ার বাতাসে উড়ে আসে পাখি
আমি সেই ভূগোলের জলীয় মেঘে ছবি আঁকি
আমার ছিল নীলকণ্ঠ প্রেমিকা
সাহসের দুর্বার হাঁস
ডানার দীপ্তিতে একরোখা সুর
মনোভূমি জুড়ে রঙিন উল্লাস
বিকেলের টেবিলে সন্ধ্যা নামলে
গ্লাসে গ্লাসে ভার্মিলিনের ঢেউ
আমাদের ভেজানোর গন্ধ ছড়ায়
গন্ধের ভেতর পূজারীর সনির্বন্ধ কম্পন
মালাবার উপকূল হয়ে যায়
নিমীলিত কথনের ভারে
পুুত্রকন্যারা ফিরে আসে রাক্ষস খোক্কসের ঘরে
ভাঙাবুক জুড়ে দেয় দু একটা নিখুঁত পয়ার
চাঁদ ফিরে এলে পাল তোলা নৌকায়
পার হয় দেখি নীল রঙের অরাজনৈতিক
সুদেব বক্সীর বিনিদ্র ময়ূর….
১২
হাঁটতে বেরিয়ে
🌱
উচ্চ রক্তচাপ,থাইরয়েড আর মধুমেহ
নিয়ে বেশিদূর হাঁটা যায় না
মৃত্যুর ভাবনাগুলি কুকুর হয়ে
দৌড়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে থাকি
শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টি হলো না
বিকেলগুলি আরোগ্যহীন
নষ্ট সভ্যতার বাঁশি বাজিয়ে
চলে যাচ্ছে
রাত্রির দিকে
১৩
মুখ
🌱
পৃথিবীজুড়ে ধর্মরা ঘর বানাচ্ছে
পৃথিবীজুড়ে মানবেরা মরে যাচ্ছে
বহুদিন পর কোনো প্রত্নসন্ধানী
এই পথে আয়না নিয়ে এলে
ইতিহাসেরা মুখ দেখবে:
কোথাও রক্তাক্ত মুখ
কোথাও বিদ্বেষের নৃশংস গর্জন…
১৪
কল্যাণী
🌱
আজ আর কল্যাণী নেই?
শুধু তাকে ডাকি বারেবারে
আমাদের শোকাবহ জুড়ে
ভীরু তমসার গান ঝরে
কে দেবে আলো জ্বেলে তবে?
সন্ধ্যার পানপাত্রে মদিরা ঢেলে
সাজাবে টেবিলে?
আর সস্নেহ উষ্ণতার স্পর্শে জাগাবে!
আমরা সবাই কল্যাণ
আমাদের ঘরকন্না জুড়ে
থাকে কল্যাণী
তার কাছে সান্ত্বনা পাই বলে
আমরা এখনও আত্মহত্যা করিনি
কত সংকট আজ পার হচ্ছে যুগ
আমাদের অসহায়তায় ডুবে যাচ্ছে চাঁদ
কল্যাণী দেখে যাও
তোমার কল্যাণেরা আজ পুষেছে বিষাদ!
১৫
খিদে
🌱
পালাতে পারি না কোথাও
আমি ও আমার ছায়া কাছাকাছি থাকি
দুপুরে গরম ভাতের ঘ্রাণ এলে
খিদে পায়
রোজ রোজ খিদে পায় শুধু!
এই পুকুরের ঘাটে দু'দণ্ড বসি
বহু পুরনো সিঁড়িতে দেখি নূপুরের শব্দ লেগে আছে
আলতা পরা খালি পা কার উঠানামা করে?
দুয়ার খোলা আছে
বাগানের হাওয়া আসছে বসন্তের আমন্ত্রণ নিয়ে
সব কুঁড়ি ফুটবে এবার অনুরাগের পরশ পেয়ে!
পালাতে পারি না,
মাঝে মাঝে কোকিলের মতো ডাকি—
কেন ডাকি?
আমার ছায়াটি বোঝে সব, শুধু আমিই বুঝি না;
আমার শুধু খিদে পায়
এ আর এক অন্য খিদে—
খিদের আগুনে হৃদয় সেঁকি!
১৬
প্রস্তুতি
🌱
তোমার আঁচলে কত নক্ষত্র ফুটেছে
বিচিত্র আলোর ঝিকিমিকি
আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখি!
ওখানে হৃদয় রাখবো তোমার আলোয়
ওখানেই রেখে দেবো আমার বাঁশির সুর
ওখানে কখনো হবে না অন্ধকার!
শুধু রাত্রির সন্তান হয়ে বেঁচে থাকা যায়?
মাইল মাইল রাস্তা হেঁটে জীবনের আয়ু হলো ক্ষয়
অন্ধকারে নিজেকেও বিশ্বাসঘাতক মনে হয়
সারারাত যদিও জেগে থাকি
সারারাত যদিও নক্ষত্রফুল কুড়াই
তবু এক উজ্জীবনের ডাক আসে শুনি
দীর্ঘশ্বাসগুলি লুকিয়ে ফেলি
আর তৃষ্ণাগুলি অস্বীকার করি
গভীর নির্জনে একা চুপি চুপি যাই…
১৭
এই জন্ম
🌱
যে শব্দ গান হয়নি
আমি সে শব্দের কাছে যাইনি কোনোদিন;
যে মেঘ বৃষ্টি দেয়নি
আমি কি সেই মেঘের কাছে গেছি?
আমার শস্যের ক্ষেতে শব্দ আর গান
আমার মাথার ওপর মেঘ আর বৃষ্টির সম্মোহন।
এই জন্ম শুধুই বাঁশি
এ জীবন শুধুই ভেজা ভেজা অভিমান
দুপুর বিকেল হয়ে আসে
বিকেল রাত্রির ডাক পায়—
গেরুয়া আলোর পথে নামে রাঙাচেলি
রাত্রিতে হেসে উঠবে অদ্ভুত জ্যোৎস্নায়!
বিশ্বাসের ধ্বনিগুলি বেজে ওঠে
অলৌকিক সমুদ্রের নৌকাগুলি ছেড়ে যায়
একে একে সমস্ত নাবিকেরা সাদা পোশাক পরে
আমিও ধূসর গন্ধ মুছে ফেলি মনে মনে
উপলব্ধির সব জানালায়
আমার আসক্তি তীব্র হলে
আবার আবার মেঘ জমে
শব্দেরা গান হয়ে ফেরে।
১৮
একা একা একুশ শতক
🌱
তোমাকে আর বৃষ্টির ভেতর ডাকব না
আমাদের সামান্য কথার জমি
শস্যনিধি তুলে নিয়ে গেছে বিহ্বল
চৈত্রদগ্ধ কাল পেরিয়ে গেলে
এখন বজ্রের দিন
এখন বিচ্ছিন্ন সব অধ্যাবসায়।
সংকেতের গৃহত্যাগ, ব্যঞ্জনার সন্ন্যাস
হাওয়ায় হাওয়ায় ওড়ে কুটিল পরাগ
কথাও কথান্তরে যেতে যেতে
শুধুই বিলম্ব ঘুরে আসে
কীভাবে বোঝাব কলরব?
ভেসে গেছে বিগত উচ্ছ্বাসে
যৌবনের শব।
সতর্ক কান্নার দিনে কত পাখি এসে ফিরে গেছে
পাখিদের আনাগোনা, প্রহরে প্রহরে ঝরেপড়া ডাক
কুড়িয়েছি বন্য স্বভাবে;
দাঁতেও চিবিয়েছি লতাগুল্মের ডাল
অচেনা ফুলের কাছে হেসে
কখনও কখনও জেনেছি কুশল।
কত ঢেউ উঠেছে; ঢেউকে তরঙ্গ বলে
সম্মোহনে তার আবেগে নেমেছি—
ঢেউ বয়ে গেছে অন্যখাতে
কূল ভেঙে অকূলের পশ্চাতে।
শব্দের তরণি শুধু আমার
আর নৈঃশব্দ্যের দাঁড়
ভাসমান থেকে থেকে চলে গেছে দিন
ফিরেও তাকায়নি সুখবর।
জীবন ঘড়ির মতো বাজতে বাজতে
রাতের তারার দিকে কখন ফিরেছে
জানি না কিছুই তার—
শুধু পূর্ণ হয়েছে ষোলকলা
গুনে গুনে দেখি মাত্রা; সেও চমৎকার।
ছন্দপতনের পাড়ায় যদিও আঁধার
জোনাকির নকশায় সে এক ভাষা
যে ভাষায় প্রত্ন যুগের ইতিহাস
লিখে গেছে কীর্তিনাশা।
ভ্রমের জড়তা থেকে কেবলই ক্রূর এক জাগরণ
আমাকে উষ্ণ করে যায়—
আমার গানের ধর্ম,আমার স্বপ্নের বাল্যকাল
এখনও তার নিকটে ঘুমায়।
ভাষাফুল ফুটে ওঠে
মুকুলিত ভাষার সমারোহ
বোধের শয্যায় মন রেখে
শব্দে শব্দে রাখি দেহ।
দেহ এসে দেহ নিয়ে যাবে
মন এসে ছোঁবে নাকো মন?
কাত্যায়নী শরৎ মাতাবে
আমি কেন হব না কাত্যায়ন?
নির্বাসন এতই নিবিড়
দিঘির ভেতর পদ্ম
পদ্মের ভেতর দিঘি
মনে হবে দিঘি-পদ্ম সবাই স্থির।
বাক্য আর বাক্যবাণ জুড়ে
শুধু যুদ্ধগান?
যুদ্ধের আরতি তবে প্রেমের আখ্যান হয়ে
কখন আসে ঘুরে?
পংক্তি ভেঙে যায়, মাত্রা বাড়ে কমে
জীবন জীবনকে টানে
মানুষকে চেনে নামে;
যদিও নাম একটি চিহ্ন
যদিও জীবনকে টানে যমে।
আমরা শুধু কুয়োতলায় ঘুরপাক খাই
জলে ভিজতে ভিজতে পিপাসার জল চাই
ব্যক্তিগত পিপাসা আমাদের
পিপাসার ভাষাও ব্যক্তিগত
একদিন স্বপ্নে ছিলে তুমি
স্বপ্নে এসে গল্প করে যেতে।
গল্পরা ডানাওয়ালা, ছল ছল চোখ
তাদের পেছনে সারারাত ছুটোছুটি
তুমি ধরতে, আমিও ধরতাম
তবুও খালি আমাদের হাত দুটি।
কোনও গল্পের অদ্ভুত শিং, নকশা হরিণী
কোনও গল্পের মায়াবী ঠোঁটে চতুর বাঁকা হাসি
পুলক জাগাত স্পর্শ তাদের
ধুকপুক বুক লজ্জায় নত
বাজাতে পারত না বাঁশি।
কাছে দূরের তফাত ছিল না
দেখা ও না দেখার দূরত্ব কত দূর!
ঢেউ উঠছিল, ঢেউ উঠছিল
হৃদয় ভরা একটি সমুদ্দুর।
উড়ছিল সব সাদা কাগজ
গৃহনিপুণ কেউ ছিল না
আলোর পূজা ছিল শহর জুড়ে
সাদা কাগজ পুড়ছিল অক্ষরে।
ভরসারা সব যাচ্ছিল পথ ধরে
নতুন পথের আবিষ্কারে তখন ছিল জোর
অন্ধকারে স্পর্শ করেছিল
স্পর্শাতুর আঙুলগুলি কার?
আমরা দোদুল দুলছিলাম
আকাশ থেকে নামছিল দোলনাগুলি
রশ্মির রশিতে ছিল বাঁধা
উঠতে-নামতে উঠতে-নামতে
কেবল গোলকধাঁধা।
এখন শুধু বৃষ্টি এলো
কাঁপন পাওয়া বৃষ্টিতে ভিজি একা
এ মধ্যরাতে আমি বৈষ্ণব পদ
আমার সাথে চণ্ডীদাসের দেখা।
মৃত এবং জীবিত চণ্ডীদাস
দুজন এসে দুইদিকে গান—
কী করে গাই?
গান ভেসে যায়, গান ভেসে যায়
কেউকে ডাকি না—
অভিমানরা সব বাসা বদল করে গেছে
তাদের ঘরে অন্য সবাই বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানী
সত্যের জিরাফ, বারুদের বন্দুকে
ভর্তি করেছে বাস্তব সব কাহিনি।
আকৃষ্টরা বেশ হাসিখুশি
সারাদিন মোবাইলে
মনুষ্যজন্ম লুকিয়ে ফেলেছে
দেবদেবী হবে বলে।
কাদের পাশে কারা থাকবে
কারা চুল বাঁধবে না আর
এলোমেলো শাড়ি খোলা বুকেই
তাদের হবে নৌকা বিহার!
সভ্যতার সব দোকানে দোকানে সাজান উচ্ছ্বাস
কিনছে সবাই
সাঁতার কাটবে কেউ কেউ ওরা
চিকন ডানায়, ঘুঙুর বাঁধা লাল পায়ের হাঁস!
দূরে অনিমেষ, দাঁড়িয়ে থাকি
ক্লান্তির দূত আসছে এদিকেই
আর সব ভার বইতে পারি না
এ পাণ্ডুলিপিও ভিজে একসা।
সব কথার জমিতে অশ্রু জমছে
চাষ হবে না! চাষ হবে না!
বিষাদ বলদ চলতে-ফিরতে
জ্যোৎস্না চাটছে, আলো পাচ্ছে না!
একা একাই একুশ শতক
পার হয়ে যাই
গন্তব্যহারা একটি কৃষক—
শব্দবীজে যদিও জন্মায় দু-একটি চারা।
🌺
তৈমুর খান, জন্ম ২৮ জানুয়ারি ১৯৬৭, বীরভূম জেলার অন্তর্গত পানিসাইল গ্রামে। পিতা ও মাতা : জিকির খান ও নওরাতুন। শিক্ষা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্য
নিয়ে মাস্টার ডিগ্রি এবং প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি। পেশা : উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের
সহশিক্ষক। প্রকাশিত গ্রন্থ : কোথায় পা রাখি, বৃষ্টিতরু, খা শূন্য আমাকে খা, আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা, জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর, একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ, প্রত্নচরিত, নির্বাচিত কবিতা, উন্মাদ বিকেলের জংশন, স্তব্ধতার ভেতর এক নিরুত্তর হাসি, বৃত্তের ভেতরে জল, জ্যোৎস্নায় সারারাত খেলে হিরণ্য মাছেরা ইত্যাদি
। পুরস্কার: নতুনগতি সাহিত্য পুরস্কার, কবিরুল ইসলাম স্মৃতি পুরস্কার, দৌড় সাহিত্য সম্মান, অক্সিজেন সাহিত্য সম্মান এবং সুখচাঁদ সরকার স্মৃতি পুরস্কার। ঠিকানা : রামরামপুর, শান্তিপাড়া, রামপুরহাট, বীরভূম জেলা, পিন কোড ৭৩১২২৪, পশ্চিমবঙ্গ, ভারত। ফোন নম্বর ৯৩৩২৯৯১২৫০
কি পড়লাম! আর্তনাদের সহবত । সময়,এই সমন । ঘটনা,সময়ের ঘটনা। চোখের জলে ভাসছে প্রকৃতি। কবি তার কথা বলছেন। কবি আমার কথা বলছেন।অসাড় হয়ে বসে আছি। ঠিক এই মুহূর্তে কোনো যোগ্য বিশেষণ আমার কাছে নেই। শুধু আমি আছি।
ReplyDeleteঅনন্য অনুভব । সময় গভীরভাবে সরব । শুভেচ্ছা ।
ReplyDeleteসময়ের শব্দমিছিল.. 🌹❤️🙏
ReplyDeleteঅসাধারণ
ReplyDeleteঅসাধারণ
ReplyDelete