শৃঙ্গার
মণিরক্তগোলা চোখ; কাদের দেবতা দেখে জটিল যুবক
কপিশ তিলের পাশে পেতে ইচ্ছে করে? তার শ্বাসে ভাবো মদের দ্যোতনা
পাবে— তা হবার নয়— বস্তু-পরাঙ্মুখ হতে তার আরও কিছু যুগ
যাবে।
কাদের দেবতা বলে ঘুমে ও বাহনে ব’সে, “চোখের বিপক্ষে যাওয়া
ত্রাণ!”
যাও, প্রভু ভেবে যাও, যাও যাতে একা-একা পারো
যুবকের মুখে দিতে মণিরক্তগোলা দৃষ্টি, কিছুটা বিরোধ
দুধের আকারে; তাকে হতে হবে প্রতিবর্তে এতটা সরল,
সে শুধু হাসির মধ্যে মদের দৌরাত্ম্য দেবে, লঘু দুঃখে মাতাল হবে না।
এ খুব পুরনো ক্রিয়া; ভাতে ও ভাতারে দাঁত রাখামাত্র টের পেয়ে যাওয়া
কাকে কতখানি খাওয়া শরীরসম্মত, কাকে কতখানি ভেঙে
ছড়াতে ছড়াতে ডাকা অপার্থিব নাঙ, ক্রমে ছলে বলে তাকেও চেবানো।
সে-ই কি দেবতা, যাকে জটিল যুবক চাও?
যাকে বলো, “বিপক্ষে চোখের
যাওয়ার সমস্ত গতি বাঁজা করে দিলি! তোর মুখে নুড়ো জ্বেলে দিই, হারামি!”
বিছানা দু’-ফাঁক করে সে গেল কোথায়? তাকে
ফেরাতে গমন ক্ষয়ে যাবে।
জটিল যুবক এর কিছুই জানে না। ভাবে রতিস্পৃহা ব্যক্তিগত কিছু।
তাকে সমষ্টির মধ্যে নিংড়ানোই লীলা। এতে রিপু লাগে, প্ররোচনা লাগে।
চোখের সপক্ষে গিয়ে মণিরক্তগোলা দৃশ্য সানুপুঙ্খ বোঝাতে বোঝাতে
তার ভ্রম নষ্ট করো, বলো, “মন সব! মন মায়া
দোহনের পর মেদ...”
যুবক ক্রমশ খুব সরল উপায়ে যাতে নধর তিলের বৃত্তে শ্বাস
ফেলে মরে যায়, তার জন্য এত ছল, চিন্তা,
দেবতা ও চোখের বিরোধ।
অথচ সে হাসি পেলে ইদানীং মৃদু, বশংবদ।
রাতের আড়ালে তাকে আরও আরও জ্যান্ত লাগে রোজ।
প্রজনন
যা অস্বীকার ও আবিষ্কারের মধ্যে আনাগোনা করছে, তা ততক্ষণ গণিত
যতক্ষণ কেউ তাকে ধর্তব্যের মধ্যে নিতে পারেনি।
এই অস্পর্শজনিত স্থিতি একক, বস্তুনিষ্ঠ, গোপন, অনাত্মীয় অথচ
প্রচণ্ড কাছাকাছি আসে। হঠাৎ মুখের ইস্পাতে চোখ পড়ে গেলে যে সংকট,
তাকে এড়িয়ে যাওয়ার বিদ্যায় একে খুঁজে পেতে পারো।
সেই মুগ্ধতাও তো নতুন— পরাক্রমশালী স্ত্রী ও অনুগামী পুরুষের শ্বাস
বিনিময়—
মধ্যবর্তী ঢেউ ও বালি, পোশাক ও কাঁকড়া, নুলিয়া,
প্রতিক্রিয়াহীন নৌকা
গলে যেতে থাকে, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য এক তরঙ্গের মধ্যে উভয়ের সমঝোতা
বা ধর্ষণ—
সেই মুগ্ধতাও তো নতুন। রাত পোকা নামিয়ে দেবে ক্রিয়া শেষ হলেই;
হুল ও যূথবদ্ধতা শিখে নেওয়া জরুরি যেহেতু, যেহেতু পরিবার বা সংশোধন কক্ষ
মুহুর্মুহু জায়গা বদল করে, ফলত পোকা নামে, রস হয়...
অস্বীকারে শুরু, আবিষ্কারে শেষ।
মাঝের আনাগোনা গণিত; রূপ, যা বিক্ষোভের অনুষ্ঠান,
তাকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বোঝা
এবং প্রতিক্রিয়ায় নিজেরই ঘিনঘিনে বিগ্রহের সামনে হাঁটু গেড়ে
প্রার্থনা— “দাও!
সেই স্মার্ত জন্তু যার নির্ভরশীলতা প্রশ্নের তোয়াক্কা করে না। দাও
সেই
ক্ষুদ্র, সীমাবদ্ধ মণ্ড যা উৎসকেই ঠকাবে, উদ্ধারও করবে,
ঘেন্নায় হত্যা
ও প্রেমে শুশ্রূষা দেবে, যার বৃহৎ হতে থাকা যুগপৎ বর ও শাপ; বল্লরী ভেঙে
ধর্মসহায়ক গাছ... দাও! গরাদের দরজা ও দরজায় জড়ানো অবরোধ...”
মধ্যস্থতার ছলাকলা আর গতি পায় না। ঢেউ ও বালি, পোশাকের কাঁকড়া,
নৌকা-ভরপুর প্রতিক্রিয়া, ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য পর্যটক আদপে ভুল দৃশ্য;
পরাক্রমশালী স্ত্রী ও সন্দেহে ভঙ্গুর পুরুষ মোনাজাত নিভিয়ে বাস্তব
হল।
এবার অপেক্ষা। দায়িত্বের গৃহ। স্মৃতি ও পুনরুত্থান। রমণীয় ফলাগম—
অনাত্মীয়, প্রতিক্রিয়াময়।
আসঙ্গ
আবার বিদ্যুৎক্ষেত্রে আঙুল, বিহার। নখ ত্রাসবিন্দু ছুঁয়ে দেয় যেই
প্লুত, বামাবর্ত স্বর ষাঁড়ের ভঙ্গিমা তুলে তালুভর্তি প্রস্রবণে কাঁপে।
এ কার বিদ্যুৎ? কোন পারঙ্গমতায় নীচু হতে হতে পরিবাহী হওয়া?
বিন্দু প্রদক্ষিণ করে কীলক মধ্যমা। ঘামে ভিজে আসে খিল ও দরোজা।
মাথা এ তড়িৎক্ষেত্রে বহুবার গেছে, গিয়ে বেরিয়ে এসেছে চন্দ্রাহত।
ভাষা পাল্টে যায়, মুখ শূন্য হয়ে যেতে থাকে, স্মৃতি,
ভবিষ্যৎ, সত্তা, আয়ু
বক্রগতি পাওয়া মাত্র গোল ব্যবস্থার মধ্যে বৈবাহিক হয়ে ওঠে ক্রমে।
অথচ আঙুল নাচে, ষাঁড়ের ভঙ্গিমা ভেঙে যমজ গম্বুজ মুগ্ধ হয়।
রসিক, অত্বর জিভ চূড়া স্পর্শ করে; যোগ; পারিপার্শ্বিকের কালো মেঘ
চোখ ঝাপসা করে দেয়। কোথায়, কোথায় দৃশ্য? শ্মশান ও
আঁতুড়ে তফাত
তালুভর্তি প্রস্রবণে মুহুর্মুহু ধুয়ে যায়। ত্রাসবিন্দু, দ্যাখো, আলো
হল।
একে কে নেভাবে? দেবে প্রতিসরণের খেলা? আঙুলের
আগা থেমে আসে।
হল? বৈদ্যুতিক হল আমোদের রসাতল? প্রবাহের আচমন হল?
ক্রমশ বিদ্যুৎক্ষেত্র লাজুক, ভিখিরি, ক্লান্ত, ধীরে ধীরে অধাতব ঘুম...
আঙুল মুখের গর্তে তড়িতের ওম রাখে। জন্মস্বাদ। সামুদ্রিক। নুন।
মাথায় চাঁদের বিষ ছড়ানোর আগে, মন, বিশ্রামের শিবিরে ফেরাও।
আবর্ত
কিন্তু জানি এই লাল-নীল যোগসাজশে না তো তোমার ঋণ মকুব হবে, না তো
সমাজপ্রধান হিসেবে আমার পরিচয় পাপতাপহরণে কাজে আসবে কখনও।
দু’জনেই স্বীকারোক্তিমূলক ভজনায় লুটোপুটি খেয়েছি, কিন্তু
সেসব বাল্যদশা ছিল।
তখন একে অন্যের এঁটো খেলে কিছু এসে যেত না, এখন আসে।
আমি আমার ব্যাধির কথা জানাতে চাইনি, জানালে তুমি শুশ্রূষার মতো হাত-পা বিছিয়ে
কিছু তো একটা তুকতাক করতেই, সেরেও উঠতাম হয়তো। কিন্তু জানি
এই লাল-নীল যোগসাজশে না তো তোমার সিদ্ধি পূর্বাবস্থায় ফিরে আসবে, না তো
সমাজশিরোমণি হিসেবে আমি আমার প্রজ্ঞা, যাকে নানাবিধ উপায়ে (সেসব
সাক্ষাতে বলব)
পরাবিদ্যা রূপে সর্বজনমান্যতা দেওয়াতে পেরেছি, তাকে গুমখুনের দিকে
ঠেলে দিতে পারব। এ হয় না। যেখানে বসেছি, সেখান থেকে বস্তু ও ব্যক্তি
উভয়ই
ঘৃণ্য লাগে। শাস্তি যা উচিত ছিল, তাই পাচ্ছি। তোমার আরাধ্যা, যাকে
নিয়মমাফিক শরীর
উৎসর্গ না করলে জনপদ থেকে এক-একটি যুবতী হঠাৎ হারিয়ে যায়, তার লোলস্তনী
অবয়বের সামনে কাঁপতে কাঁপতে অন্তর্বাস নামাই। কী বীভৎস সন্ত্রাসের
ভেতর
আমাদের সম্ভোগ চলে, তা ব্যাখ্যায় পীড়া বাড়াতে চাই না। ঘোরতর গৃহস্থ
হওয়া ব্যতীত
অন্য যে-কোনও উপায়েই আমি ভাল থাকতাম। কিন্তু আপাতত সমাজসর্বেসর্বা,
আপাতত থালার সামনে বসে বিষনিবারণ মন্ত্র আধঘণ্টা জপ, তারপর ক্ষুধানিবৃত্তির জন্য
সামান্য খেয়ে বাকিটুকু ভক্তজটলায় উপুড় করে দেওয়া।
তোমাকে এতকিছু জানাচ্ছি যাতে তুমি করুণা নামানোর আগে যোগসাজশ
কালো করে দিয়ে যেতে পারো। জ্যোতিষে তোমার বিশ্বাস নেই, জানি। তবে
তুমিই আমার নির্বাণের কারণ হবে, এই আপ্তবাক্য ভ্রম হতে পারে না।
সেসব পরের ভাবনা। আপাতত তুমি নিজেকে প্রস্তুত করো। তোমার আরাধ্যা
(সে নিজে না চাইলে আমি তাকে ছুঁয়েও দেখতাম না)
নিশিকর্তব্যের পর
স্নান করতে করতে তোমার নাম ফিসফিস করে ইদানীং। শুনেছি আড়ালে।
আপাতত প্রস্তুতি। আপাতত শান। ধার তীক্ষ্ণ করে তুলতে যা যা সম্ভব
সব...
কিন্তু এই নীল যোগসাজশে না তো তোমার ধর্ম স্থিতি পাবে, না তো আমার।
হত্যা সম্পাদিত হলে আমাকে আরতি কোরো তুমি।
অতিলৌকিক
সেসব অশ্লীল তাপ, আঙুর-গলন, যাতে তক্ষকের
বাঁকা অন্ধকার
নেচে উঠতে থাকে, যাতে গরমে গরমে আজ মোমভর্তি লক্ষাধিক মেয়ে
ছিবড়ে পুরুষের মুখে প্রমেহর দাগ দেখে আঁতকে ওঠে, ছুটে দূরে যায়।
সেসব অশ্লীল তাপ, বিছানায় প্রেত আর আমাকেই পাওয়া গেল, তদন্ত ব্যাপক।
অধ্যাপনা ছেড়ে কেন ছাত্র হতে যাই? যাই নক্ষত্রবিহারে, গুঁজি
কীলক ও বোঁটা?
ছিল ইস্তেহার, ছিল কার বধূ উপলব্ধ, দর
কষাকষি শেষে অনুতাপ চুষে
কে দেবে আরাম, বহু ক্রনিকল ছিল; শালা,
নেশা আবিষ্কারে এত দুধের বিকাশ
ফুটে ফুটে ক্ষীর, নাও জরা পোয়ানোর যুগে ঠান্ডা করো ছাল!
ঠান্ডা করো ছাল? কই তক্ষকের ছাল কই! ছালের বদলে ঊর্ণাজাল।
শরীর ঘিনঘিন করে। আত্মরতি সাধ হয়। “তুমি নোংরা!” বলার স্বৈরিণী
মোম, গালা, মধু, দুধ সমস্ত লোপাট
করে বহুদূর চলে গেছে বলে
একা একা এ-সমস্ত শুধরে নিতে হয়, হাত মুখের ব্যায়ামে দিতে হয়।
সেসব অশ্লীল তাপ গ্রহবলাৎকার থেকে দহনের প্রতর্ক ও ছায়া
এনেছে বলেই খুব হুমড়ি খেয়ে বুঝতে হবে, এমনও তো দুরবস্থা নয়।
বরং সার্কাসে গিয়ে ব্যবসা ও ট্রাপিজ, কিছু নধর নেতার মুখ, তৃণ,
মূল দেখা যেতে পারে; “তুমি শুদ্ধ” বলে ঠাট্টা
গোঁজা যেতে পারে।
দর্শনের সাপ নিয়ে খেলা দেখানোর থেকে ভাল একা গির্জাজলে শুয়ে
নাম, সর্বনাম নিয়ে মুহুর্মুহু প্রতিস্পর্ধা— স্বাস্থ্য,
মুখ দুই-ই প্লুত থাকে।
ছিবড়ে পুরুষের পাশে কুসুম-কুসুম মেয়ে যতবার ভয়ে অনুগত,
ততবার প্রেম হলে, শিশু হলে, চিঠি হলে ছাত্রদশা
ঠিকই কেটে যেত!
অথচ অশ্লীল তাপে অধ্যাপনা ভাল লাগে। শুতে ভাল লাগে পশ্বাচারে।
তক্ষক জড়িয়ে ধরে সমরতিবাহু হওয়া, এভাবেই ত্রিভুজ, সীবন।
গলা আঙুরের মধ্যে নিরীক্ষা নাচাতে এসে এত বেশি একা হয়ে গেছি—
ধমনী দু-ফাঁক করে চলে যেতে ইচ্ছে হয়, পলিসির ইয়ে মারা যাবে...
আছে ক্রনিকল, কাকে কীভাবে কখন কোথা সরোবরে নেমে যাওয়া থেকে
আটকে দিতে হবে, যাতে গ্রহবলাৎকারে সৃষ্ট গ্রহ কিংবা গ্রহের আঘাটা
পুনরায় পায় কিছু ভারসাম্যহীন, বোকা, ঊর্ণাজাল ছিঁড়ে ফেলা
লোক।
সেখানে শালীন তাপে হাত-পা সেঁকার পর মদ নয়, ছায়া ভেসে যায়...
নির্মাণ
How can we live without the unknown in front of us?
—René Char, ‘Argument’
এবং দু’দিকে ভ্রাম্যমান দুই কারিগর উল্লম্ব খোলা দরজা পেরিয়ে
যতই একে অন্যের দিকে গড়িয়ে আসার চেষ্টা করুক, নির্ধারিত দূরত্ব তেমনই স্থির
যেমন দরজা— কেন্দ্রাতিগ, সন্দেহপ্রবণ।
নেপথ্যে হাওয়া কিংবা হাওয়ার ভূমিকা...
বনাঞ্চল থেকে কাঠ সরে আসে। আচ্ছন্ন করাতের সাথে মাখামাখি অভিজ্ঞতা
কাঠের জেল্লা উদ্ধারের নিয়মে এত প্রাচীন, শুধু দরজা অব্দি এগোতেই
দারুপ্রতিমার কাঠামো ঠান্ডা হয়ে যায়। এই ঠান্ডা প্রতিমার বরদা
মুদ্রা পেরনো
হাওয়ায় কী এমন ঘুণাক্ষর ভেসে গেল যা স্পর্শে ধরা দেয় না, শুধু উল্লম্ব
খুলে যাওয়া দরজায় গেঁথে যেতে থাকে? এবং দু’দিকে দুই ভ্রাম্যমান
কারিগর
দরজা স্পর্শ করে উপুড় হয়ে শোয়, একে অন্যের সংসার শুনতে শুনতে
খানিক কাঁদে, যতটা পারা যায় ঘুণাক্ষর ছুঁয়ে ছুঁয়ে বোঝার
চেষ্টা করে
অশ্রুতপূর্ব সংকেত, তাদের হাসি ও ঘুম একসাথে পায়। কোনটা প্রথমে জরুরি?
ঘুমের ভেতর এই দরজা নিয়মমাফিক খোলে। বনাঞ্চলে কাঠ ততখানি জঙ্গম
যতখানি পশুত্ব উদ্ভিদ সঙ্গে করে জন্মায়। দুই কারিগর একে অন্যের গা
টিপে টিপে
দ্যাখে, উদ্দাম হাসাহাসি করে। দরজা গলিয়ে ফেলার পর যাতায়াত
গঠনমূলক নাকি প্রত্যাশার অধিক বিনির্মাণে ডুবে যাবে, এই চিন্তাও হয় না যে তা নয়,
বরং এখান থেকেই ঘুম হননের সূত্রপাত। আচ্ছন্ন করাতের ওপর কাঠ গরম
করার ফুল
ফুটতে থাকে, নেপথ্যে হাওয়া কতখানি দালালের ভূমিকা পালন করেছে
টের পাওয়া
প্রায় অসম্ভব, দুই ভ্রাম্যমান কারিগর বিবাহের প্রস্তুতি ও কাঠের
বিকল্প সন্ধান শুরু করে,
আর ঠিক সেই প্রবল বিচ্যুতির মুহূর্তে চোখ তির্যক খুলে যায়।
জেগে ওঠা আগের মতোই। কেন্দ্রাতিগ। সন্দেহপ্রবণ। কাঠ বনাঞ্চলের
ইশারায়
কাঠামো ত্যাগ করতে শুরু করেছে। এই অবশ্যম্ভাবীর সামনে দাঁড়িয়ে
বলরামের
প্রাণত্যাগ মনে পড়ে কেন? অহেতুক। অহেতুক। উপেক্ষাই শ্রেয়।
দরজা আগের মতোই। উল্লম্ব। প্রতিক্রিয়াহীন। শুধু দুই কারিগর
নির্ধারিত দূরত্ব পেরিয়ে
একে অপরের হাড়ে ছেনি ঠুকছে, চৌকাঠ আতুর। দারুপ্রতিমার ঘন অধিষ্ঠান এই...
'দি এমব্রেস’, ঈগন শ্যিলা
(১৯১৭)
বাহুপাশের ভেতর তুমি অভ্যস্ত হও, হও সহোদরা, হও একই রাক্ষসীর
পেট থেকে উঠে আসা সেই হিলহিলে সাপ যার বিষ অপেক্ষায় ঘন সবুজ, স্নেহে কালো, কামে রং থেকে অনেক দূর। বাহুপাশের
প্রভু তুমি, দাসী তুমি, বোঝো, আজ অব্দি যে-কোনও ষড়যন্ত্র বিবাহের নষ্টামি টেনে আনে, খেতে বলে ফোয়ারা ও লবেজান পেশি; বোঝো, পুনরাবৃত্তিই কবিতা, নিজস্ব স্বরের লোভে একের পর এক
ব্রহ্মচারী কোলে উর্বশী বসানোর সর্বনাশ করে, আর শেষ বয়সে
পৌঁছে টের পায় কোলভর্তি পাঁক, গলার প্রতিটা আঁশে পূর্বসূরির
আম্লিক যোনিসংকেত। রাখো বুকের পেশিতে নখ; চুলে নিঃশ্বাস
গাঁথতে গাঁথতে স্বর্গবেশ্যাদের গান শোনানোর খেয়ালে ঘুমিয়ে যাওয়া পুরুষ তোমায়
ছাড়া অন্য নক্ষত্র দ্যাখেনি, ঋতু বদলের পর তোমায় ধ্যানে
কতবার আহ্বান করেছে সে! সাড়া জাগেনি, সে প্রসঙ্গ অতীত। এখন
একই গর্ভ ভাগাভাগি করে জন্মপূর্ব নিদ্রা স্মরণ করো, দ্যাখো
সম্ভোগের তখনই সূত্রপাত, ভাদ্রজন্তুর মতো সুযোগ ও সহাবস্থান
নিয়ে কী সুখেই না ছিলে, আর আজ লজ্জা এসে পৃথক করে দেয়
ছায়া ও ছায়ার মালিকানা।
“অজাচার! অজাচার!” ফিসফিস করতে
থাকা রাত। তার মেদবিহ্বল পেটের তলায় তোমাদের সাঁতার ততক্ষণ ধর্মীয় যতক্ষণ পোশাক
নিয়ে শরীর চিন্তিত নয়। শোনো হাত-পা-চোয়াল-বগল-জঙ্ঘা-কাঁধ-চোখ-চিৎকার দুমড়ে
যাওয়া সহচর বা সহোদরের বিজল্প, হিলহিলে সাপ থেকে আস্তে
আস্তে তুমি মানবী, স্তন ঘুমন্ত পুরুষের কনুইয়ের মর্মর
জড়িয়ে আলো, অক্ষৌহিনী পঙ্গপালে পৃথুলা রাত্রি তার আকাশ
ছেয়ে ফেলার পর শস্যের লোভে তুমি কুমারসম্ভবের অষ্টম সর্গ স্মরণ করার কোশেশ করছ,
কিন্তু এই গোগ্রাস বাহুবন্ধন নির্লোভ পাথরমালা, এর ক্ষুদ্রতম অংশও কেবলমাত্র আশ্রয়ের দ্যোতক, সন্তান
নামিয়ে ফুরিয়ে যাওয়ায় এর বিশ্বাস নেই। বাহুপাশের ভেতর তুমি চতুর্মুণ্ড আদিপিতা
স্মরণ করো, দ্যাখো তার সংবর্তপথগামী লালসা ও ঈপ্সিত আত্মজা,
দুই বৃগলের চিরায়ত জোট, বোঝো, একে আরম্ভে ও সমাপ্তিতে ঘিরে ফেলা সম্ভব নয়, প্রভুত্বে
বা দাসত্বে এর কিচ্ছু যায় আসে না, শুধু পুনরাবৃত্তি,
যা কবিতা, যা সর্বজনমান্যতার ঘেরাটোপ থেকে
বহুদূরে অবস্থান করে, তা-ই প্রবাহ, তা-ই
বাহু ও সংরাগ।
শ্বেত, বিস্রস্ত বিছানায় সৌরকৌতূহল গড়াগড়ি খাচ্ছে। অভ্যস্ত হও। নর্মসহচর ছেড়ে
একা একা বিপদে নেমো না।
চমৎকার আগরের কথা বলা। আত্ম উন্মোচন। একেকটা পাপড়ি মেলে একেকটা কবিতার ফুল মানুষই ফোটাতে পারে নিজস্ব বাগানে। একরাশ ভালো লাগা নিয়ে পাঠ শেষ করলাম।
ReplyDeleteআন্তরিক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন 🙏
Deleteএই লেখাগুলি একবারমাত্র পাঠে হৃদয়ঙ্গম হবে না।বারবার পড়তে হবে।আচ্ছন্নতার বাইরে যে কনফিডেন্স কবির কলমে,সেই জায়গায় পৌঁছাতে পাঠকের সময় লাগবে।
ReplyDeleteঅশেষ ধন্যবাদ 🙏
ReplyDelete