নির্বাচিত কবিতা ।। অনিন্দ্য রায়


 

অনিন্দ্য রায়

 

জন্ম: ২৮ জানুয়ারি, ১৯৭১। বাঁকুড়া।

পড়াশুনো: বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিকেল কলেজ ও বর্ধমান মেডিকেল কলেজ (অপথ্যালমোলজি)।

পেশা: চিকিৎসক।

লেখালেখির শুরু গত শতকের নব্বইয়ের দশকে।

প্রকাশিত কবিতার বই:

তিরিশে ফেব্রুয়ারি, স্পার্ক অ্যাভেনিউ, এক পঙ্‌ক্তির অনিন্দ্য রায়, কাগজের হারপুন, তস্কর, একটা মহানিমগাছ, সামান্য রুমানি হোক, অনিন্দ্য রায়ের কবিতা।

.............................................................................

 

 

তারপর ঈশ্বর বললেন, “আলো হোকআর জ্বলে উঠল আলো।

ঈশ্বর সৃষ্টি করলেন মহাশূন্য, বানালেন নেবুলা, নক্ষত্র, গ্রহ, উপগ্রহ।

বানালেন পৃথিবী। আকাশ। বায়ু। জল ও অগ্নি।

পাহাড়, পর্বত, মহাসাগর, নদী।

বানালেন প্রাণ, তৃণ থেকে মহীরূহ, অ্যামিবা, মৎস, সরীসৃপ , পক্ষী, পশুকূল; বানালেন মানুষ।

মানুষকে দিলেন ইশারা ও ভাষা, প্রেম ও হিংসা, যৌনতা, বিশ্বাস ও সন্দেহ, গণিত ও সঃগীত, বিজ্ঞান, সাহিত্য, চারু, কারু, অভিনয়, সকলকিছু।

সবকিছু।

সৃষ্টি করলেন ব্রহ্মাণ্ড।

তারপর সব কাজের শেষে তিনি উঠে দাঁড়িয়ে তাকালেন নিজের এই রচনার দিকে। তাঁর মন ভরে গেল।নিজের হাতের দিকে চোখ গেল তাঁর। দেখলেন, এতোক্ষণ তিনি যা কিছু নিয়ে নাড়াচাড়া করেছেন সেসবের চূর্ণ লেগে আছে হাতে, আঙুলের ফাঁকে ।

তিনি হাত ঝেড়ে ফেলতে গেলেন।

কেমন একটা মায়া হল তাঁর।

তিনি হাতে লেগে থাকা সমস্ত কিছু, এই ব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির সমস্ত দিয়ে বানালেন কবিতা।

.................................................................................

 

অক্ষরশরীরে বৃষ্টি

 

.

চব্বিশ নিসর্গ, ভারী, তুলতে পারি না

 

প্রতিক্রিয়া, তোমার সচিব, স্বাক্ষরের নীচে

               রেখেছে কৌশল শূন্য

সমস্ত গড়াতে থাকে

খসে পড়ে লজ্জা ঘৃণা ভয়

 

কিছু আর তুলতে পারি না

 

তোমার ষোড়শদল পদ্মে দেখি ভ্রমর বসেছে

 

তাড়াতে পারি না

 

 

শেকল শীতের কর্মী, খুলে যেতে উত্তেজনা সহসা দাঁড়ায়

সাফল্য মাংসল চূড়া, তোমার মাথার চেয়ে উঁচু দেখে

                            বাঁটোয়ারা করি

 

জটিলা কুটিলা কাঁদে

       শেকলের দুইপ্রান্ত টানে যারা

                     তারাই সতীন

 

শীতের দুপিঠে চর্বি

গ্রন্থাগার আড়ালে অর্ধেক

 

বাকি যা পড়তে পারিতোমার নিশ্বাসে কাঁপে

সমস্ত অক্ষর

 

 

শ্রীমোম, প্রতিভা গলে পড়ছে, আগুন

দুর্বৃত্ত... তোমার রিপু সুতো ছিঁড়ে আত্মপ্রতারক

 

আসঙ্গ খঞ্জর হারিয়েছে কারা? দেশলাই

                হারিয়েছে অখণ্ড আঁধারে?

তোমার রত্রির তেষ্টা, দিনের খিদের

              অঙ্ক ভুল করি

দেখি

কখন মুদ্রায় ঘষে মুখছবি সরল করেছ!

 

 

শুভেচ্ছা সমাধি। কালো পতাকা নমিত নয়দিকে

 

কেবল নৈর্ঋত ফাঁকা, দরজাও নেই

              তোমার মার্জার ওদিকে হারিয়ে গেল

 

গলায় গ্যালাক্সি ওর ঝুলিয়ে দিয়েছে কারা

কেবল গোয়েন্দা জানে

 

চক্ষু নেই কর্ণ নেই

নাক-জিভ-ত্বক নেই

 

সামান্য একটি কোষ শূন্যের সংঘ থেকে

আলাদা হয়েছে

 


এই পথে অশ্ব যায়, দেখব বলে তো চক্ষু রাখলাম

 

পাতায় বাতাস পিছলে পড়ছে

               শুনব বলে তো কর্ণ রাখলাম

 

তোমার বাহান্ন কবুতর একসাথে দানা খেত যদি

জিহ্বা রাখলাম

 

ত্বক খুলে ফেললাম অস্তিত্ব সমগ্র থেকে

               হেসে উঠলাম

                      কেঁদে উঠলাম

আগুন লাগল সর্বান্তঃকরণে

ধোঁয়ায় নাসিকা রাখলাম  


 

 

ক্ষরশরীরের তাপে রক্ত ফুটছে

         শরীরের মাত্রা খুলে যায়

 

তোমাকে দেখতে পাচ্ছি না

       চোখের নিষ্ফল আঠা চিটিয়ে রেখেছে

             বিন্দু বসুন্ধরা

 

ছুঁতেই পারছি না

 

অক্ষরশরীরে বৃষ্টি, পাতায় পাতায় খসে পড়ছে

অভীপ্সা

 

জিরোতন্ত্র

 

শূন্যতাকে বোঝানোর জন্য একটি গোল চিহ্নের

ব্যবহার হয়ে থাকে

 

-এর দিকে দেখুন, মাঝে কী অসম্ভব ফাঁকা

বৃত্তাকার রেখা

    এই শূন্যতাকে সীমাবদ্ধ করছে

এইভাবে অনন্তের সঙ্গে শূন্যের পৃথকীকরণ হল

 

অনন্তে পৌঁছতে

শূন্যটিকে হরের অংশে গড়িয়ে আসতে হবে

 

মহাশূন্যবাদীদের দল

                ’-কে সেই দিকে ঠেলছে

 

 


আরশি বিদ্যুৎ, তুমি

 

নীচু ছিল মেঘ সেই বনে

  বিরহের গাছ কিছু হলে

     এরমই তো হত মনে

      হয়

 

সেই বন ছিল আগে হাতের নাগাল

 ইহকাল

   এরমই তো হত

 

শনিবার ছুটি হলে স্কুল

বনে গিয়ে পাতা কুড়িয়েছি

 নীচু মেঘ লাগত মাথায়

  ভিজে যেত ব্যাকরণ

    বই

 

এই শনিবার ছুটি হলে

এরমই তো হত মনে হয়

 

 

 

যখন গুনতে পারতাম ফাল্গুনের হাড় কেউ আমার জন্য কিনে

               রেখেছিল সমীকরণের মতো একটা চাদর

তা ছাড়া সে সব দিনের কথা মনেই পড়ত না

তখন কি ব্যান্ডপার্টি ছাড়া দেখা করতে আসত না গাঁদাফুল

                              নামের মেয়েটি?

তা ছাড়া সেসব দিনের পিঠে চাবুকের দাগ ছিল বলে

                     অঙ্কগুলো উত্তরে মিলে যেত

যুক্তাক্ষর ছাড়াই একটার পর একটা রঙের নাম বলতে পারতাম

যতক্ষণ না দম ফুরোয়সেই প্রথম ফুরিয়ে যাওয়ার শুরু

একটা মাত্র চাদর, তার ওপর কত সহজেই মিশে গেছে ঘুম

কেবল দিনের বেলা সে সব কথা মনেই পড়ে না

যখন লিখতে পারতাম ফেব্রুয়ারির চরিত্র আমার লম্বাটে খাতায়

কেউ বুলিয়ে দিয়েছিল খয়েরি রবার, আর ঘুমিয়ে পড়েছিলাম

নয়ত এখনো খেলতে পারতাম ছায়াগুলোর সাথে?

 

 

 

আমার ভাবনা কোনো পানপাতা, মোড়া যেনশুধু

মুখে নিয়ে দ্যাখোস্বেচ্ছাকৃত শস্যহীন মাঠে পুঁতে এসেছি

আকাঙ্ক্ষাদের। আর কোনো পিছুটান নেই। শুধু বালিসের খোলে

ঢেলে দিও আতরযেন তা শীতের রাতে জেগে ওঠে আর সে গন্ধে

মৌমাছি উড়ে এসে বলে, তার নাম: স্মৃতি

 

 

 

 


১৫



আরশিবিদ্যুৎ, তুমি ভয়

তন্তুদীর্ণতায় ঐ উদ্ভিদ, ঐ বাদ্যবোল ভুমি

দূরত্বে রজনীবোধগুলি যত হরণ করি, তত ঐ ভ্রান্তি

কেন এনে দিয়েছিলে ?

যদি নিজে না বিশ্বাস কর, কেমন প্রেমিক ?

 

 

 

প্রকৃতির এইসব

 

 

কচ্ছপের জন্য অপেক্ষা করছে ভায়োলিনবাদকের পোষা

খরগোশ, ফুলকপিপাতার সকালে তাদের তো দেখা হয়েছিল

যাদের আমরা বলি রেফারি সেরকম পোষাকের

জনৈক লেখক কচ্ছপ ও খরগোশটিকে

একই গল্পে দৌড়তে বলেছেকে ঘুমিয়ে পড়বে

সে কথা অন্য, এখন শুধু ভায়োলিন বাজছে, যেন কেউ

ঘুমোতে না পারে, দর্শকবিহীন এই দৌড় কবে শুরু হবে

অপেক্ষা করছে ভায়োলিনবাদক তার খরগোশ নিয়ে

 

আমার কাজ তো ঘুমিয়ে পড়ার, যেন খরগোশটি

ঘুমের জায়গাই না পায়

 

 

স্বয়ম্ভু রাত্রির জন্য শুভেচ্ছাপত্র লিখে রেখেছি, শ্বাসমোচনের

কি কোনও উদ্দেশ্য রয়েছে? এই যে বামন গল্পের বই

উলটে আছে, তার কোনও বিকল্প রয়েছে? এত না জেনেই

লিখে রাখছি, পাঁচ লাইনের গদ্য, যা তাকে শুভেচ্ছা জানায়

আর মোমবাতি জ্বেলে আমাদের জাগিয়ে রাখে

 

 

অনুসিদ্ধান্ত

 

 

শূন্য ও প্রথম ছেদ গতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। গতশীল কণারা এই

বধ্যক্ষেত্রের মধ্যে হস্তানরিত হয়। দেখি, কিন্তু বাধা দিই

না। শূন্যতার বিপরীতে তাদের বিম্বপাতন খোঁজ করি। এই

পদ্ধতি মিথ্যাকে অস্বিকার করার ভিত্তিতে গঠিত বলেই সমস্ত

সূত্রের অনুশীলন এর দ্বারা সম্ভবপর

 

 

 

 

আয়তনের স্থায়িত্ব থাকে নাক্রিয়াপদ এতই বিভিন্ন যে, সব

শর্ত এখনো আয়ত্ত নয়। তা যে অলৌকিক এমন বলছি না,

তবু প্রসারমাপক ও সম্পর্কের মাত্রা বিন্যাস স্থির নয়। তাই

বিভ্রান্তিমূলক অবস্থান বা অস্থিরতা বাদ যায়। ছাঁটাই তত্ত্বের

এই চর্চা আমি সমর্থন করি না, সে সব শর্ত এখনো আয়ত্ত্ব

নয় আর স্থায়িত্ববিষয়ে সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া হয়ে গেছে

 

 


 

স্পার্ক অ্যাভেনিউ

 

 

কমল রঙের স্নান, চোখ বলতে এতক্ষণ চাওয়া, অক্ষর

পালটানোর ন্যুডিটি কি জলজাতির নীর জনতা? পুকুর বলতে

শ্বাস আগলানো রফিজিওলজি; কজনই বা পথিক! দেখছে

জিরো পরে যে ডুব দিচ্ছে শূন্যয়ন সেই, সূচের না থেকে দাঁড়িয়ে

আছি, পানের কৌড়ি এ দিয়ে হয় না, তবুও গান হল

তবলায় হাত রাখাও হল গুনের গুনিয়ে

 

 

 

 

আরামকে দারায় বসিয়ে ওঠাতে ভুলে গেছি, তুমিও জলকেবিনে

নির্দল হয়েছ, চৈত্রের রস মুছতে ঘাসের তোয়ালে ক্ষয়ে যায়

সাবান যায় বালতিঘাটার দিকে, সিরিঞ্জের সীতা এখানে বাষ্প

ফোসকা দেখে লজ্জাও পাচ্ছে। তোমার ফুল নেই, এপ্রিল নেই, মাংস

ছোটোখাটো নাচ, পেরিয়ে বৃষ্টি খোলার বোতাম লাগালাম

 

২৬

পেয়ালা, নিজেই পিপাসা, সুযোগে তোমার কাছে

ব্যবহার করিপ্ররোচনা, জিহ্বায় সুখের কোরকগুলি

চালু হয়, তবু আরো গভীরতা চাই, তোমার স্বাস্থ্যের

                জন্য প্রাণের বিনোদ চাই আরো

 

গল্প হলেও সত্যি

 

২২.

হাঁস, প্রিয় চরিত্রটি। জলের মধ্যে গোয়েন্দা লাগাই। কারনামা ডুবতে দেখে মনখারাপ হল। কে ডিম কুড়িয়ে আনে সফলতা নিষ্ফলতা থেকে? তবে কি মাংসের জন্য ছুরি আরো সুন্দর সেজেছে? তাকে খুঁজতে বাতাসেও বিদ্যুৎ মাখানো, হাত রাখলে মৃগী সেরে যায়। গল্পও মিলে যায় শেষ চ্যাপ্টারে। এই তো দস্তানা আর এই আঙুলের দাগ। নোটবুকে পালকটি ভেজা রয়েছে এখনো। রুটির বসতবাড়ি অ্যাডোলেশানের আগে ঢুকতে দেয় না। ততদিন বাইরে থেকে কুড়িয়ে আনতে হয় খিদের চাকতিগুলো। তবে কি মাংসের জন্য সম্পর্ক ভালো রাখছে? বাতাসেও মশলা মেশানো। হাঁ সেরে যায়, জিভ গুটিয়ে খেলা ছেড়ে দ্যায়। মুদ্রার পিঠ দুটো একসাথে পড়তে পেলে যে গল্প হয় তার চরিত্র বর্তুল। থামানো যায় না

 

 

২৪

 

একশ দোপাটি ছিল ক্লাস থ্রি-রনট থ্রি-র তত আবুলিশএত ঠোঙা ফুলেছে মধ্যে,

বাতাসের আর কোনো অবদান নেইখেলা আর কোনো দেওয়ালে চেপ্টে নেই। একই      

ডিগ্রি। দু তরফেই একটা উনোন। রুটির রেজাল্ট আজ আর মনে নেই। থ্রি-টুকু নামানো। নট

থ্রি-র ছিল প্রচলিত গল্পের ছক। ঘুঁটি হারিয়েছে। এত কাগজ ছড়ানো, নেশার রোদ ঘষে ঘষে

পাতলা হয়ে গেল। এ লেখার কথাই নয়, তবু ব্ল্যাঙ্কের ডাক পড়ল রেঞ্জে। পাপড়ি

খুলতে ঘড়ির কাঁটা কাজে লাগাই। আর কোনো অবদান নেই। রুপের থালা, কাঁটা,

চামচ। খেতে বসে ঐ খেলা কথা মনে পড়ে। রুটি আর মেদের প্রলেপ। দ্য বিউটি অ্যান্ড

দ্য বিস্ট। ফুলের তাড়না তো এখানেই সঠিক

 

 

 

অধাতু দিয়ে বানানো শহর

 

১  ছাদের উপর ঘুরে বেড়াচ্ছে সূর্যাস্তের কাকাতুয়াগুলো

   এখন তুমি কোথায় চলে যাচ্ছ

         হলুদ মলাটের অবকাশ?

   তির্যক দৌড়ের পর হাঁপাচ্ছে সপ্রতিভ বাংলা লিরিক

   আমাদের দীর্ঘশ্বাস অতোটা পারেনি

        শুধু অস্থায়ী চকের দাগ

              মুছে যায় নগ্ন শ্লেট থেকে

   এখন তুমি কোথায় উড়িয়ে দিচ্ছ কাকাতুয়োগুলোকে

         তারা চিৎকার করছে

               আর ঠোকর মারছে দৈনিক কাগজে

 

 

২  


আমি বলতে চাইছি এক ভ্যাপসা আস্তাবলের গল্প

    আর ঢোলক বাজছে পরিকল্পনা মাফিক

                          হাততালির শব্দে উড়ে যাচ্ছে

                                  ক্ষণস্থায়ী বকগুলো

   লন্ঠনের আত্মা লুটিয়ে পড়ছে খড়ের ওপর

   আমি বলতে চাইছি অগিকাণ্ডের বিষয়ে

                 দমকলের শব্দে ঘুম ভাঙছে সারা শহরের

   এত ধোঁয়া যে বিশেষ্য চিনতে পারছে না ক্রিয়াপদকে

                                  আর কবিতা পড়ছে মধ্যরাত্রি

 

 


নামফলকের কাঠ

 

১   শায়িত অন্ধকার, তুমি আমার নাম জানলে কী করে? আমি কোনো সমাজবদ্ধ

    বিশেষণ নই, অব্যয়ের শীতলতা নই, আমার জন্য কেন খুলে যাচ্ছে ব্যাকরণের

    মলাট

    আমি শুধু চেয়েছি ছয়টি ঋতুর ফোকরে কী আছে দেখে নিতে আর গাছের

    পাতার মতো তিনশ পঁয়ষট্টি দিন ঝুলিয়ে রাখতে

 

 

 ৭  


মেঘ দেখে মনে হয় আকাশের জুলফি

    কখন যে বৃষ্টি নামবে... বর্ষাতি পরিয়ে দেওয়া হবে আমাদের ভ্রান্তিগুলোকে

    বিরক্তিকর কর্মহীনতা হাই তুলবে ঘরের কোণায়

 

 

১০  


অন্ধকারজগতের চাঁদ চন্দ্রবিন্দুর মতো উঠে আছে ঘাড়ে। কেউ তাকে উত্যক্ত

     করছে তাই এতোগুলো বর্ণবিপর্যয়

     আমি তো সামান্য এক নামফলকের কাঠ, এ সব দেখছি আর বাংলা ভাষার প্রতি

     হেঁট করছি মাথা

 

অমানুষিক পিপীলিকাশ্রেনি

 

 

প্রজাতিভিন্নতা বর্ণ নির্ভর, আকার নির্ভর

সন্ধিপদ বিশিষ্ট উপাদান নয়, তাই লাল ও কালো

পিঁপড়ের ভালোবাসাবাসি নিষিদ্ধ

পিপীলিকা সংহিতায়

 

তবু ডিম কি বৈশিষ্টহীন সাদা নয়?

এবং ইতর শারীরবৃত্তিয় ক্রিয়াপদ ও বিশেষণ ছেড়ে

তাদের ভিন্নতাবোধ ব্যক্তিগত বিশেষ্যের

মুখাপেক্ষী হয়েছে সন্দেহে

এছাড়াও পিঁপড়েরা গোষ্ঠীতে বিভক্ত

 

 

গোষ্ঠী গড়ে ওঠে প্রসবক্ষম রানিকে কেন্দ্র করে, তাই

রানিহারা গোষ্ঠীর পুরুষেরা চঞ্চল ও শ্রমিকেরা বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে

রানির মৃত্যুতে শোকগ্রস্ত শ্রমিকদের চোখের জল

ফেলতে দেখেছি

যদিও তাদের স্কুলপাঠ্যে যৌনতা বিষয়ে কোনো রচনা থাকে না  

 

 

 

 

বিবাহ অপ্রচলিত তাই পদবি সংকট নেই

শুধু নাম ব্যবহৃত হয়

 

ইদানিং সংখ্যাধিক্যের হেতু নতুন শিশুর জন্য

নতুন নাম আর পাওয়া যাচ্ছে না

পিঁপড়েরা ভাবছে জন্ম নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে মানুষের

পরামর্শ নেবে কিনা

 

 

 

 

 

সুড়ঙ্গের দুইপ্রান্তে দ্বৈতসত্তা থাকে; ভেতরে বাইরে

বসবাসযোগ্যতা নিয়ে প্রকৃতি নির্ণীত হয়

যেন ভেতরের যৌনতা আর বাইরের শ্রমরেখা দ্বন্দ্বমূলক

এইভাবে সারিবদ্ধ গতিবিনিময় থেকে

শর্করাপ্রীতির মতো অনুশাসনের নীতি, প্রথা

যৌনতা ও শ্রম পৃথক করেছে

 

রানি, যা স্ত্রীলিঙ্গবাচক

ভালোবাসা নির্ধারণ করে, নিয়ন্ত্রণ করে ক্রীড়া

মাতৃতান্ত্রিক বুঝি ? পিঁপড়ের বহুগামীতায় ?

পিঁপড়ের খাদ্যনির্ভর সংগ্রাম ও সারিবদ্ধ বাহিনীপ্রতীক

এ সম্পর্কযুক্ত নয়

তবু তাদের সমাজ যৌন ও অযৌন

এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে

যৌনতা ও শ্রম পৃথক করেছে সব পার্থিব পিঁপড়ে

 

 

রানির অদ্বিতীয় অহংকার মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়েছে

নিম্নপ্রাণীদের কিছু কিছু বোধ স্বভাবগত আত্মসাৎ

করেছে মানুষ

 

রানি, যা স্ত্রীলিঙ্গবাচক

ভালোবাসা নির্ধারণ করে, নিয়ন্ত্রণ করে ক্রীড়া

যেন প্রণয়রেফারি

তাই ধর্ষণ নেই

তাই কোনো শ্রমিক রানির সহবাস কামনা করে না

 

তবু এখানেও

স্ত্রীর একমাত্র কাজ ডিম পেড়ে যাওয়া

আর ডিম ডিম ডিম ডিম পেড়ে যাওয়া

যতদিন না পরবর্তী স্ত্রীর জন্ম হয় ও তার অদ্বিতীয়তা নষ্ট হয়

 

রানির এ জীবনপ্রাণালী

মানুষের মধ্যেও কিছু সংক্রামিত হয়েছে

 

 

 

শ্রমিকশ্রেণির সমষ্টিচেতনা নিয়ে বহুআলোচনা হয়েছে

 

যখন চলাচল করে

বাহিনীপ্রধান ও সাধারণের অবিরত সম্পর্কবিন্যাস

তাদের আপেক্ষিকগতি সম্পর্কিত কিছু সমস্যার এখনও সমাধান হয়নি

শুধু জানা গেছে, অগ্রের একটি পিঁপড়ের গমনপ্রক্রিয়া

পশ্চাতের পিঁপড়েরা অনুসরণ করে

 

বস্তুত পিঁপড়েসভ্যাতা এখনও অবিশ্বাস আয়ত্ত করেনি

 

 

 

সম্প্রতি এক সাদা পিঁপড়ের প্রাদুর্ভাব দেখা গেল, যারা কিছু

লাল ও কালো পিঁপড়েকে দাস করে রেখেছে ও রানির মর্যাদাহানির

চেষ্টা করছে

বহু আগে কোনো কোনো গ্রহ ও গ্রহাণুতে তাদের প্রস্তাবিত

অস্তিত্ব নিয়ে বহু তর্ক হয়েছিল

পৃথিবীতে তাদের অনুপ্রবেশপন্থাও তর্কসাপেক্ষ

তবু তাদের শক্তি ও প্রবৃত্তি নিয়ে কোনো তর্ক নেই। তারা কিছু

লাল ও কালো পিঁপড়েকে দাস করে রেখেছে ও রানির মর্যাদাহানির

চেষ্টা করছে



 

ফুল

 

প্রতিটি ফুলের আছে পাপের অতীত, যেমন টগর, নিজেরই পিতাকে হত্যা

রে, অভিশাপে, ফুটেছে উদ্ভিদে, গায়ে অশৌচের বস্ত্র, সাদা, এ দশায় গন্ধ

তো মাখতে পায় না”, মাস্টার বলেছে তাকে এই গল্প; ঘুরে ঘুরে ফুলেদের সত্তা

দেখে, বৃত্তান্ত কী, অপরাধ এবং দুর্গতি, বোঝে, একদৃষ্টে নয়নতারা কীভাবে অন্ধ

 

হল, হয়ত মা-কে দেখছে নগ্ন, স্নানরতা, ঝলসে গেছে চোখ; জবাটি লম্পট

কন্যাকে কামনা করে অতখানি রক্তিম হয়েছে আর প্রবল শিশ্নটি পাপড়ি

ফাঁক করে ঝুলে আছে সারাদিন টইটই, ফুল ছিঁড়ে, বৃতি ছিঁড়ে, ওতে ঠোঁট 

দিয়ে চুষে এইসব রহস্য জেনেছে সে, বয়স এগারো, চুল উস্কো, মুখে খড়ি

মাতৃহারা, না, সৎমা রয়েছে আর একজন দিদি, না, খুকুমনি, সে-ও সৎ

নিজের বলতে বাবা, মাতাল, সবদিন ঘরেও ফেরে না, নেশা কাটলে ফেরৎ

চায় জন্মের মুজুরি, পেটায়, লাথি মারে তলপেটে, দরজায় বোবা সপ্তদশী

অনুজ্জ্বল দাঁড়িয়ে থাকে, বাপটি ওদিকে চায়, ভুষো লম্ফের অলোয় মিটমিট

 

করে চোখ, জিভ বের হয়ে আসে, ওটুকু বাচ্চা ছেলে হাতে নেয় আধকানা ইঁট

বাপ জবা হয়ে ওঠার আগেই তো তাকে হতে হবে টগরফুলের মতো দোষী

 

ভাস্কর্য

 

আকাশ ফাটিয়ে আংরা পড়ছে, দেখি, সমস্ত ঘাসপাত জ্বলে শুকাল টটকোর জল

খবি কী, কাঁদিস না, নুনু, মা গেছে কুথাকে”, পিঠে মৃদু থাপ্পড় মেরে মেরে

বাচ্চাকে ভোলায়, সে প্রস্তরমুর্তি এক, রোদের বল্লমে তার শরীরের শুকনো বল্কল

ছিঁড়ে বেরোয় না এক ফোঁটা ঘাম, এখন এ কান্নার মুখে মাই গুঁজে দেবে কে রে

 

সে তো গ্রীষ্মের পুরুষ এক, বুকের ইঁদারা নাই, খাদ্যপানীয় নাই, সে কেবল বাপ

আমানি খেয়েছে আর পেচ্ছাপ করেছে, কোনওই তরল ধরে রাখতে পারে নি দেহে  

কী জানি কী বনবরার খোঁজে বউ জঙ্গলে ঢুকেছে, ছাউনিতে গর্ত করে সূর্যের প্রতাপ  

ঝরে পড়ছে ডেরায়, সন্তান কঁকিয়ে উঠছে আর সেও পিতৃত্বের খটখটে স্নেহে

 

বুকে টেনে নিচ্ছে, নিয়ে চেঁচিয়ে গাইতে চাচ্ছে আংবাং গান, কোনোদিন তাকে

তার মা শুনিয়েছিল যা, শালা, মনেও পড়ে না, মাকে যদিও বা খানিকটা পায়

গানের কিছুই খাঁড়া হয় না যে, শিশুটি চিল্লায়, যেটুকু খাবার দেয় মুখে, এক ফাঁকে

হজম করে তা মেরে দেয়, কাঁদছে আবার, অসহায় পিতা হাত রাখে পুত্রের গলায়

 

অন্য হাতে পাথর তুলে সে মুখে ধরে শিশুটির, ঠুসে দেয়, “খা,খা,ব্যাটা, খা পাথর  

হজম হবেক না র‍্যা, ভরা প্যাট, ভুখ কুনু নশিশুটি ভাস্কর্য হয়ে ওঠে অতঃপর



 

একটা মহানিমগাছ

 

একটা মহানিমগাছ, একটা মনস্তত্ত্বের মতো পুকুর 

এরকম আলোছায়াতেই কিশোরেরা 

প্রথম ছিপের ব্যবহার শেখে 

একটা মহানিমগাছ, একটা দীর্ঘশ্বাসের মতো পাথর 

ভুল ও সান্ত্বনাগুলি চাপা দিয়ে চলে যাওয়া যায়

 

অনেক বছর পর যখন ফিরে আসে

একটা মহানিমগাছ, একটা স্মৃতিফলকের মতো বক 

একটা মহানিমগাছ, একটা ভুল-করার মতো ঢিল

                                           জলে ছুড়ে দেওয়া  

 

 


রেললাইন পাতার জন্য

 

রেললাইন পাতার জন্য এদেশে এসেছিলেন তিনি

সঙ্গে এনেছিলেন একটা লোককাহিনির রেকাবি  

পাখির ঠোঁট জমানোর শখ ছিল তাঁর

আর ছিল একটা বিশ্বস্ত পিস্তল

গান যে খুব একটা ভালো লাগত, তা নয়

তবু শিকারের ভেতর একধরণের নিষ্ঠুরতা থাকে

                 সেটা বেশ উপভোগ করতেন

বাংলায় পাখির অভাব কোনওদিনই ছিল না

ঠোঁট জমানোর শখ ছিল তাঁর

শোনা যায়, এক তান্ত্রিকের সঙ্গে বন্ধুত্বও হয়েছিল

সঙ্গে এনেছিলেন একটা লোককাহিনির রেকাবি  

শোনা যায়, উন্মাদ হওয়ার আগে

সেটা ছুড়ে দিয়েছিলেন মহাকাশে 

বাংলায় চাঁদের অভাব কোনওদিনই ছিল না

রেললাইন পাতার জন্য এদেশে এসেছিলেন তিনি

দীর্ঘ, চকচকে দুটি লোহার পাত

         আমাদের সংস্কৃতির ওপর রেখে গেছেন

 

 

 

তোমার মুখের ছায়া

 

তোমার মুখের ছায়া, মনে পড়ে, বিভাবরীসিনি

আকাশে দুখানি চাঁদ, আলোটুকু চোখের উপমা

কোনওদিন হাতে সুতো বেঁধে করেছিলাম মানত

তারপর ভুলে গেছি, নামটুকু লিখেও রাখিনি 

কেবল তাকানোটুকু, ছোঁওয়াটুকু ছিল বুঝি জমা

পাথুরে এবড়ো মুখ, খেবড়ো চিবুক, নাকে নথ 

এতদিন পরে খুব শোধ করতে ইচ্ছে করে আজ

এত বছরের পথ পেরোতে মাটির ঘোড়া কিনি

সে পারে না জোরে ছুটতে, থেমে যায় দিনের আওয়াজ  

নীরবতা ঘন হয়, চিনতে পারি না তো, প্রিয়তমা

পড়ে থাকে আলপথ 

 

তুমি যা আটাশ ভাবো  

 

তুমি যা আটাশ ভাবো তাকে চোদ্দ দুগুনে ভেবেছি  

অথবা চার-সাতে, শুনে হেসে ফেলো, “সে তো একই হল”

“ভেবো না ফলের কথা”, বলি, “গুণনীয়কের দায়  

থেকে কখনও কি মুক্তি পাব?”— “মনখারাপ কি করে! ছি!

এসব চিন্তায়, জানি, আটাশ এক্কে ওই একই গুণফলও”     

ভাঙানির গূঢ়তত্ত্ব চাইলেই কি মুছে ফেলা যায়! 

অথচ কী মজা, দেখো, চোদ্দ, সাত, চার, দুই, এক

যোগ করলে আঠাশই তো, মেনে নেবে পাগলছাগলও    

আমাদের রিলেশন যেন, খুশি মতো ভাঙা যায়

আবার তা জোড়া লাগে, জোড়গুলি দৃশ্যত জিকজ্যাক 

তবু মেলে গায়-গায় 

 

 

 

তিরিশের দশকের বাংলা কবিতাকে

 

শেষ বিকেলের মতো ঝোপঝাড়, কাছিমের শব

পলেস্তারা অনেকটাই খসে গেছে, ফোকলা ইঁটগুলি 

ইঁদুর তোলপাড় করে মাঝেমধ্যে, তা ছাড়া অরব 

 

জানলা গলে বার হয়, ঢোকে আরও, চড়ুই, মামুলি

ওদিকে মাটির ঢিপি, উনুন কিছুটা, রান্নাঘর

ছিল তবে, ছিল ধান গোলাভর্তি, খেয়েছে বুলবুলি

 

হঠাৎ তোমার সঙ্গে দেখা হল এতদিন পর

পূর্বপুরুষের ভিটে মনে পড়ল প্রথম ঝলকে

সেরম অব্যবহৃত, একাকী সেরম, খণ্ডহর

 

ভাঙা দেয়ালের মতো নষ্ট সম্পর্কের স্তূপ চোখে

ইচ্ছে করে সন্ধেবেলা দরজা ঠেলে সোজা ঢুকে পড়ি  

ভাবতে বয়ে যায় আজ দেখে নিলে কী যে ভাববে লোকে

 

চিনতে পেরে ছ্যাঁৎ করে সরে গেল ছায়ার প্রহরী 

মাটিতে কাগজ পেতে বসি আগেকার মতো ঠিক

ছিপি খুলতে গিয়ে ফেনা ছিটকে মুখে লেগেছে তারপরই

 

চুম্বনে তা মুছে দিলে, দুজনের নেশাটি খানিক   

হয়েছে যখন গাঢ় কোথাও যাব না আর ভাবি 

সে তবে আমার জন্য একটা কোনও রুম খুলে দিক

 

যদি কোনওদিন পাই এই পোড়োবাড়িটির চাবি   

 

বিন্নি ধানের খই 

 

এক ঢোলক ফেলে যাওয়ার মধ্যে প্রস্তাব, পানীয় মাপার একক দিয়ে

                                           তার নামকরণ করে ফেলি

বাজনার আত্মা একটু বাতাস, আরেকটু অপেক্ষা করতে-থাকা

অথচ হাত পড়বে না ওখানে, শ্রেণিচরিত্রে; ফেলে যাওয়ার মধ্যে ইন্ধন

তেষ্টা ফাটিয়ে ফেলল অথচ মাপের অঙ্ক মেলানো গেল না

বয়স মেলানোর প্রশ্নই ওঠে না

বল মনে করতে খেজুরপাতায় নূপুর গুলিয়ে যায়

একটু বাতাস, আরেকটু গ্রাম্য দর্জির পটুতা দিয়ে বানিয়ে ফেলল কেচ্ছা

এত সহজে যদি বাজে আমিও হয়ে উঠতে পারতাম

                          গানের ভেতর বিন্নি ধানের খই

কেউ ছাড়িয়ে দেবে লজ্জায়, শ্রেনিচরিত্রে, বাতাস হয়ে উঠবে পুরোটা

সামান্য বকুল-ঝরা অ্যাডোলেশনও থাকবে না

থাকবে না অ্যাডোলেশনেও ঝরা বকুল

ফেলে যাওয়ার মধ্যে অজস্র যে খোপ

                 প্রতিদিনের পোস্টকার্ড রাখলেও

                          তার জন্য একটা চিঠি হয়ে উঠল না 

অন্ধত্ব

 

কল, সাওয়ার, বালতি, মগ, সাবান

                 বাথরুমে কোনওকিছুরই প্রাণ নেই

 

শুধু জানলার কাচ তাকিয়ে আছে

শুধু জানলার কাচ তাকিয়ে আছে

শুধু জানলার কাচ তাকিয়ে আছে

শুধু জানলার কাচ তাকিয়ে আছে

শুধু জানলার কাচ তাকিয়ে আছে

দেখতে দেখতে ঘষা লাগছে চোখে

 

দেখতে দেখতে

অন্ধ হয়ে যাচ্ছে কাচ

 

..............................................................................................................................

 

 “তার একহাতে খড়ি, অন্যহাতে ডাস্টারকে তাকে বিশ্বাস করবে

-      এখন আমার কোনো অসুখ নেই/ সন্দীপন চট্টোপাধ্যায়

 

ব্ল্যাকবোর্ডে লিখতে লিখতে আর অন্য হাতে মুছতে মুছতে দেখি দুহাতেই লেগে আছে চকের বিষণ্ন গুঁড়ো

 

তো, কবিতা কী? লেখা না মোছা না ঐ চকের গুঁড়ো?

 

দেখি, গাড়ি চালাচ্ছে যে যুবক— আয়নায় পেছনের গতি ও জাড্যকে মেপে নিতে নিতে শোনে ইঞ্জিন ঘুঙুর, সান্ধ্য নেশাড়ু নিশ্চুপ ঘণ্টা তিনেক দেখছে জীবনের আল্ট্রাভায়োলেট, নিসর্গ ফ্যাক্টরি  থেকে ধোঁয়া উড়ছে মহাশূন্যে আর ধ্বনি থেকে শব্দে, শব্দ ও অর্থের সম্পর্ক-সম্পর্কহীনতায় কবিতা কী?

 

ভাবি, আর শরীর অস্থি-পেশী-রক্ত -রক্তকণিকা নিয়ে, কোষ কোষান্তরে ক্রিয়াবিক্রিয়া নিয়ে,  জৈবরসায়ন নিয়ে, সাধ ও অভীপ্সা, রাগ ও উদ্দীপনা নিয়ে কবিতায় ঢুকে পড়ে। এই কি আমি? শুধু এই কি আমি?

 

পরিবারে, সামাজিকতায়, লোকজীবনে, আড্ডায়, মশকরায় তবে সে কে? কারা? এই শহরের

আবহাওয়ায় মিশে যেতে, আলোছায়া আলোছায়া সত্তার মিছিলে খুঁজি তোমাকে, বসত

 

লিরিক, গণিত, তর্ক, সমান্তরাল জীবনে ধাক্কা লেগে দলাপাকিয়ে লাফিয়ে উঠছে মস্তিষ্কে, দেখোনিউরোট্রান্সমিটার শুরু করেছে তাদের খেলারেফারি অন্ধ কি?   

 

এভাবে কবিতা হয়!

 

কৌশল ও কলা নিয়ে ঘড়ির কাঁটার নিয়মানুবর্তিতা কি তার? ভেবে, অ্যালার্ম শেষের মজায় কাঁটা ঘুরিয়ে বারবার একই জায়গায় নিয়ে আসি। এই সরণশূন্য গোলপথ কি তার? ভেবে একে চন্দ্র, দুয়ে পক্ষ তিনে জীবিকার দেখা পাই।

 

কবিতা এভাবে হয় না !

 

 

(‘তিরিশে ফেব্রুয়ারি’-র শেষ রচনা)

 

 

 

12 comments:

  1. অপূর্ব কবিতাসংকলন। প্রায় কমবেশি প্রতিটিই বিজ্ঞান ও সাহিত্যমূল্য সমান স্মার্ট ও আধুনিকতম অনুভূতি, রূপকল্প, তত্ব চেনা ভাষ্যে সততই কবির মতো বন্ধুত্বের সমার্থক।

    ReplyDelete
  2. নির্বাচিত অনিন্দ্য রায় অসাধারণ একটি সংকলন। বৈচিত্র্যময় কবি অনিন্দ্য রায়কে সামগ্রিকভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। কবিতার ভাঙন-নির্মাণ থেকে বাস্তব-অতিবাস্তবকে কীভাবে তিনি নিজস্বতার বিচরণ ক্ষেত্র করে তুলেছেন তারই দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছে। তাঁর প্রতিটি কবিতায় আছে মেধাবী আলোকচ্ছটা এবং পরীক্ষিত এক প্রকল্প নতুন কবিদের কাছে খুবই আগ্রহের বিষয়। আমাকে ভীষণ ভালো লাগলো। কবিকে আন্তরিক ভাবেই নববর্ষের শুভেচ্ছা জানাই।

    ReplyDelete
  3. এইসব কবিতা ভুলতে পারব না। বাক্ পত্রিকাগোষ্ঠীকে ধন্যবাদ সুন্দর লেখাগুলো পাঠকের সামনে তুলে ধরার জন্য।

    ReplyDelete
  4. খুব ভালো সংকলনটি। শিক্ষণীয়। বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই কবিকে

    ReplyDelete
  5. মুখ-পদ্যচারণাটি মনন ছুঁয়ে গেল ; অন্য কবিতাগুলি বহুপাঠের পর অনুভব জানাবো...

    ReplyDelete
  6. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  7. অনিন্দ্য রায় একজন অত্যন্ত শক্তিশালী ও কুশলী কবি। ওনার কবিতা শিক্ষণীয়।

    ReplyDelete
  8. এইসব কবিতা বাংলা কবিতার সম্পদ। বাক্ পত্রিকা গোষ্ঠীকে অসং ধন্যবাদ এইরকম একটি সংখ্যা করার জন্য। অনিন্দ্যকে ভালোবাসা...

    ReplyDelete
    Replies
    1. Anindya don't need any kind of bhalobasa from a beach

      Delete
  9. অনিন্দ্যর কবিতা অনিন্দ্যর মতোই স্বতন্ত্র ব্যাক্তিত্ব। সব কবিতা একসাথে নয়, ধীরে ধীরে পড়বার, বারবার করে পড়বার। একসাথে পেয়ে খুব উপকৃত হলাম।।

    ReplyDelete
  10. বাক্ এর সৌজন্যে নির্বাচিত অনিন্দ‍্য রায় পাঠ এক আলাদা অনুভূতি ।

    ReplyDelete
  11. অসাধারণ কবিতাগুলি পড়ে মুগ্ধ হলাম।

    ReplyDelete