জন্ম: ১৯৬৬, পূর্ব মেদিনীপুর
শিক্ষা: বাংলা ভাষা ও সাহিত্য। বিশ্বভারতী, শান্তিনিকেতন
পেশা : অধ্যাপক
কবিতা লেখার শুরু: ১৯৮৮-৮৯
প্রকাশিত কবিতার বই:
জাতক
কাহিনী। মানবজনম। যুবকের ডায়েরি। মিথ্যা কবিতা। বারো হাত কাঁকুড়ের দেশ। কথামৃতের পাতা। প্রণয় কুহক। প্রোল্যাকটিন হরমোন। স্বয়ম্ভূ আলো। আত্মজীবনীর প্রস্তাবনা। আমি ও আমার ঘোড়া। বউ-বিষয়ক কবিতার রচনাপদ্ধতি।
আত্মবিলাপ
মন্ত্রবলে ঢলানি গো বিষমুগ্ধ
করেছ আমায়
পকেটে পয়সা নেই সন্ধেবেলায়
কিনেছি আতর তবু দশকর্মা
থেকে
ছড়াচ্ছি উঠোনে এই ভর সন্ধেবেলা
চক্ষু আছে, অন্ধ নই, তবুও দেখি না
পানের বটে সাজো কার জন্য
পান!
দেখে ফেললে রাতে ঘরে ঠাঁই
পাব নাকি!
পাব না, পাইও না– তাই চক্ষু বুজে আছি
বন্ধুজন মহাজন বিবেচকও
তিনি
আমাকে সান্ত্বনা দেন তুড়ি
মেরে মেরে
নারীর অপরা বিদ্যা বুঝি
তার কাছে–
অন্নদাস– মোহগ্রস্ত– কিছুই বুঝি না।
অর্থপদ
বরাভয় গড়িয়ে পড়ছে ফোঁটায়
ফোঁটায়
মেঘ হয়ে ছেয়ে ফেলতে চাইছে
সমস্ত আকাশ!
আকাশের অন্য কোনো অর্থ
নেই
কেবল জ্যোৎস্না ছাড়া, নীল রং ছাড়া, ঘুঘু পাখি ছাড়া
তবুও রাত্রিবেলা
আগুনের ফুলকি চতুর্দিকে, জল চতুর্দিকে
নৌকা কই! বৈঠা নেই কেন!
তখন যে কত রাত্রি! ঘড়ি নেই–
নেতাজি মার্ক টালির চালে
ডেকে উঠল টিকটিকি
সাপ কি! সাপ নেই কেন!
অথচ সাপের ভয়ে লখিন্দর
চোখ বুজে আছে
বেহুলার ভেলাও প্রস্তুত, ভেসে যেতে দূর স্বর্গদেশে,
স্বর্গবাসী দেবতা প্রস্তুত, একটুখানি মস্করার আশায়,
বাম হাতে ফুল নিয়ে চাঁদবেনে, তিনিও প্রস্তুত
সাপ তখন গোলাপবনে ভ্রমর
হয়ে মধু খাচ্ছে চুক চুক স্বরে
ফুল বলছে ছাড়ো, ছাড়ো, হাতে লাগছে, এ কী অসভ্যতা!
যদিও হাসছে সে চোখ মটকে
হাট্টিমাটিম পাখি ডিম
পাড়ছে তখন আঁধারে
দু-দুটো ডিমের মধ্যে একটারও বাচ্চা যদি না হয়
এই ভয়ে শিউরে উঠছে
প্রণয়গাথা
বৈষ্ণবরত্ন তিনি জ্ঞানদাস
শিষ্যটিকে পদ ধরে ধরে
রাধার শরীর কতটা উজ্জ্বল
হয় শ্যাম-দরশনে,
দেখাচ্ছেন তাই, শিষ্যটি বোঝে না কিছু
মেঘরূপ কিশোরীর চুল মনে
আসে–
তখন ইন্দ্রের সভা বেহুলার
নাচের হুল্লোড়ে সরগরম,
শিবের তৃতীয় চোখে
পার্বতীর রোষের আগুন জেগে
ওঠে,
বৃষটিকে ডেকে বলে, বাড়ি চল– রাত হল কত!
মাদলের মোহতালে সাঁওতালপল্লির
পথে রাত নেচে যায়–
নিশীথের এ ভার বহন করা
বড়োই কষ্টের,
প্রৌঢ় মালীটি তাই তিন
টাকা ট্যাঁক থেকে খুলে
শিউলি ফুলের কাছে ফেলে
রেখে যায়
রাতভর বৃষ্টি ঝরে তবু সোনারং
শস্যের আশায়।
ডোম্বিনীপদ
শব্দ ও শব্দের মধ্যবর্তী
শূন্যতার ভিতর
হারিয়ে যাচ্ছে ভুসুকুপাদের
হরিণ
তার খুরের দ্রুতগামিতাসহ
কিন্তু বনের অন্তরালে
জেগে উঠছে
একটি হলুদ শাড়ির বর্ণময়
সম্ভাষণ
আর প্রাকৃত কথাগুলোই ছুটে
যাচ্ছে দ্রুত
বনের সীমানা পেরিয়ে লোকালয়ের
দিকে
কিন্তু ডোম্বিনীর চুলের
বুনো গন্ধ
ক্রমে নেমে আসছে টিলা
গড়িয়ে গড়িয়ে
সমতলের ঘাসে–
ওইখানে শুয়ে আছে গৌড়ীয়
ব্রাহ্মণের পৈতেসহ শরীর
বৈদিক মন্ত্রের ভিতর অবলীলায়
সেঁধিয়ে যাচ্ছে ঋতুমতীর
শঙ্কা ও উচ্ছ্বাস।
দ্বৈতাদ্বৈতবাদ
মহেঞ্জোদরোর কামিনীমূর্তির
পাশে বাঁকুড়ার ঘোড়া
চুপচাপ হাঁটু মুড়ে বসে থাকে সন্ধ্যেবেলায়
শুয়োরের লেজের উপর বসে
একটি প্রজাপতি মুগ্ধ, বিবশ, অচঞ্চল।
চাষাবতার
মেজাজের ধার ধারি খুব
মেজাজের পায়ে নমস্কার
মেজাজের জলধি অতল
ভিতু আমি সাঁতার না জেনে
ডুবে যাই অতলে তাহার
জাপটে ধরি তাকে
জাপটে ধরি জ্বিহা দিয়ে
রসনা তোমার,
জাপটে ধরি সুন্দরী গো
লাল জবাফুল
পায়ের ও পাতাদুটি বিকেলবেলায়
জাপটে ধরে বলি,বউ মেজাজ নিও না
আমি পুরুষ মাত্র,সেবক তোমার
ভয়ে ভয়ে মুখ তুলে উর্দ্ধ
পানে চাই
কাহার বউ গো তুমি কাহার
ঘরণী
শিবের ঘরণী নাকি! চামুণ্ডারূপিনী
আমার বউ তো এত ফরসাই নয়!
তাহার পায়ের পাতা ফাটা
ফাটা পৌষের মাঠ
তাহার নাকে তো বলো, নোলক ছিল কি!
ছিল না-ছিল না–তুমি অন্যের ঘরণী
তবুও চাষার ব্যাটা ব্রাহ্মণঘরণীর
মেজাজ ধরেছি দ্যাখো মস্তকোপরি।
ভুবনমোহিনী
পোড়ামা-তলার কালী রাত্রিবেলা হাসো
খলখল হাস্যধ্বনি, তার মধ্যে তুমি
লুকিয়ে লুকিয়ে জপ করো কৃষ্ণনাম।
কৃষ্ণনাম জপ-কালে রতিকীট নড়ে
মোহরাশি জাপটে ধরো ভুবনমহিনী
তোমার সন্তান মোরা থাকি
দুধে-ভাতে।
শ্রীশ্রী গণেশ লিখিত
এই আমি
তোমার কাছে বসলাম সন্ধ্যেবেলা। শব্দ
ও শব্দের মধ্যবর্তী শূন্যতা সম্পর্কে আমার স্বচ্ছ কোনো ধারণা নেই। জল ও নৌকার সমঝোতার ভিত্তিতে নৌকা কীভাবে জেগে থাকে মাঝনদীতে,
এ-বিষয়ে আমার কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই। হরিধ্বনির মধ্যে কীভাবে উৎসাহে শ্মশানবন্ধুরা বয়ে নিয়ে যেতে পারে মৃতের শরীর, এ-বিষয়ে আমার কোনো স্বচ্ছ ধারণা নেই।
তুমি বলো, আমি শুধু শুনে শুনে লিখে যাই শিল্পের ভানে।
সমুদ্রবিষয়ক কবিতা
সমুদ্রবিষয়ক
কবিতায় গোয়েন্দার সন্ধানী টর্চ কিংবা শিকারি কুকুরের কোনো ভূমিকা নেই।তটভূমিকে বার বার আলিঙ্গনে বাঁধছে সামুদ্রিক ঢেউ। এই সমুদ্রঢেউকে
নীল পরির সঙ্গে তুলনা করা যায়। জ্যোৎস্না রাত্রির সমুদ্রঢেউকে সাদা পরি ভাবা যায়। ঝাউ গাছের পাতায় সমুদ্রের হাওয়া বিলি কাটছে বিকেলবেলায়,ঝাউয়ের বনে এক যুবক সঙ্গিনী যুবতিকে চুমু খাচ্ছে–তাও দেখানো যায়। 'সমুদ্রকাঁকড়ার
নখ বসে যাচ্ছে সাদা বালির বুকে'–একটু সাহসী হয়ে এরকম চিত্রকল্পও
রচনা করা যায়। কিন্তু এই ছবি আঁকার সময় সাবধান থাকতেই হবে,না হলে তিন-চারটি অচেনা যুবক হঠাৎ হাজির
হয়ে মেয়েটিকে টেনে নিয়ে যাবে বনের গভীরে। পরদিন ঝাউয়ের ডালে ঝুলে থাকবে কাচ বসানো খয়েরি রঙের
ওড়না, ঝাউ গাছের তলায় খুঁজে পাওয়া যাবে যুবতির
লাশ।
ফলত,সমুদ্রবিষয়ক কবিতায় অনাবশ্যকভাবে ঢুকে পড়বে গোয়েন্দার সন্ধানী
টর্চ ও শিকারি কুকুর।
শকুন
বর্ণময়
প্রজাপতির ওড়ার মাধুর্য ঝরে পড়ে বাতাসে। হিল্লোল
তরঙ্গিত হয় গোলাপে। শীতের বাতাস তরঙ্গে কাতর করে মানবশরীর। শকুন ধূসর বর্ণ, লুব্ধমন। ঈর্ষায় গুড়ি মেরে নেমে আসে মাটির উপর। দগ্ধ দুই ডানা চেপে বসে পড়ে পাকুড়ের শাখে। তখন সন্ধ্যেবেলা।শুঁড়িদের
মেয়েটির প্রথম ঋতুর কাতরতা দেখে ফেলে শকুনের চোখ…
নারীর যৌবনপর্বে শকুনের
চোখ তাই অবিরত ঘোরাফেরা করে–ভুবনগ্রামের
এই সুস্থির নিয়ম।
আবহমান
'রজনীগন্ধা' শব্দটি লিখে ফেলার পর আমি রজনীগন্ধার ভিতর
'কীট' এবং 'সুগন্ধ'
দুভাবেই প্রবেশ করতে পারি। তবে 'সুগন্ধ' হিসাবে প্রবেশ খুব সহজসাধ্য নয়,'কীট' হয়ে প্রবেশ করলাম তাই। কিন্তু ভিতরে ঢুকে যে কী করব তা ঠিক করতে পারলাম না সহজে। রজনীগন্ধার কুঁড়ির ভিতর
আমি ছিদ্র করতে থাকি আবহমান।
একটি আত্মহত্যার খসড়া
মরিব
ইহা নিশ্চয় জানিলাম। কোথাও আমার কণামাত্র অবশিষ্ট থাকিবে না–ইহাও নিশ্চয় জানলাম, যখন জানলাম তখন তো দুপুরবেলা। ঘুঘু পক্ষীটি গাছের উপর
ডাকিতেছে।আমার মরা হইল না।
স্বর্গের
দ্বারে আমার
জন্য তারতারাসের কুকুরটি অপেক্ষা করিতেছে। তাহার কড়ির অতীব প্রয়োজন। আমার প্রয়োজন মৃত্যুর। কিন্তু আমার নিকট করি নাই। স্বর্গের দ্বার হইতে ফিরিয়া আসিলাম।
ভারতবিদ্যা
সমুদ্রগামী
জাহাজের মাস্তুলে কোনো কাব্য নেই। সামুদ্রিক ঢেউয়ের ছোবল, জলদস্যুদের চিৎকার, কেবিনে সারারাত জেগে
থাকা সবুজবাতি; এসব উপেক্ষা করে গেঁওখালি, নরঘাট, নন্দীগ্রাম থেকে চুরি যাওয়া মেয়ে ও মদ্দরা স্বপ্ন
দেখে–ঘরে ফিরবে যেভাবেই হোক। ধান্যখোলা, নন্দীগ্রাম,বরজ, তেরপেখ্যা,
সোনাচুড়া, গোকুলনগরের খড়ের ছাউনি, মাটির দেওয়াল ঘিরে রোগ কালো লোকেদের স্বপ্ন জেগে থাকে।
দ্রুতগামী
জাহাজ,কেবিনে সর্বসমক্ষে ধর্ষিতা কিশোরী,লিঙ্গমুন্ডে ছ্যাঁকা-খাওয়া যুবা– এসব পেরিয়ে তবু চারশো বছর পর ঝড়ে বিধ্বস্ত গেঁওখালির পর্তুগিজপাড়ায় নন্দীগ্রাম
কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ত্রাণসামগ্রীসহ পৌঁছে যায়।
সংস্কৃতি
ঘন রং
অন্ধকার আর গ্রীষ্মের গুমোট রাত্তিরে
প্রস্ফুটিত
চম্পার সৌরভে মুগ্ধ
বেঁটে
কালো নাক থ্যাবড়া পুরুষেরা জুটেছিলাম
রং তামাশার
নেশায়-
কিন্তু
দীর্ঘদেহী,ফরসা, টিকালো নাক
ঘোড়সওয়ার
পুরুষেরা অস্ত্র হাতে হাজির হল
আর টুসকি
দিতে লাগল চম্পার গালে,
সন্ত্রস্ত
বাধ্য আমরা তাই পিছু হটলাম।
সারারাত
শোনা যেতে লাগল ফুর্তি, হইহল্লার
শব্দ,
দেখা
যেতে লাগল মশালের আলো,
নদীর
সমতল, পাহাড়ের ঘেরাটোপ ছাড়িয়ে
ক্রমশ
জঙ্গলের ভেতর ঢুকে যেতে লাগলাম আমরা।
চালচিত্র
পুকুরঘাটে
বাসন মাজতে মাজতে ঘোমটা ঠিক করছে অধিকারীপাড়ার নতুন বউ। ছাতারে
পাখির বাসা থেকে ডিম চুরি করছে স্কুল-ফেরত বাচ্চারা। নীচে নামানোর সময় অসাবধানে ফাটিয়েও ফেলছে।
ছবিগুলি
ভেসে ওঠে–ছবিগুলি কোথা ভেসে যায়! শালিখ ও গাঙচিলের দল ভয়ে ভয়ে উড়ে যায় চুনিবুড়ির উপর দিয়ে। বোমা ও গুলির শব্দে সন্ত্রস্ত
গ্রাম জেগে থাকে। একটি ময়ূরী তার সঙ্গীটির ফেরার আশায় রাত জাগে।
গাছের কোটরে থাকা সাপ এই
দৃশ্য দেখে ফিচেলের হাসি হাসি। খোকা ঘুমায়, পাড়া তবু জুড়ায় না কোনোমতে।
যুদ্ধসংবাদ
ধর্মপুত্তুররা
সব শত্রুসৈন্যদের ল্যাং মেরে ফেলে দিচ্ছে প্রান্তরের ঘাসে,আর শত্রুসৈন্যদের 'আহা-উহু' শব্দের
কাতরতা যথেচ্ছ হাসির উদ্রেক করছে ঘাসফড়িং ও শালিখদের।
এরকম
একটি দৃশ্যের ভিতর ময়ূর ও সাপকে ঠেলেঠুলে ঢুকিয়ে দিতে চাইছে কেউ কেউ, যাতে এই যুদ্ধটাও ধর্মযুদ্ধের একটি এপিসোড হিসাবে গণ্য হতে পারে পরবর্তীকালের
গবেষকদের কাছে। কিন্তু পোষা ময়ূরের পায়ের ঘুঙুর বেজে উঠছে সাপকে ঠুকরে দেওয়ার মুহূর্তে। তাছাড়া ধর্মপুত্তুরদের
পা মাটিতে না পড়াই শাস্ত্রসম্মত। কিন্তু মার্চের রোদ্দুরে তাদের পা, এমনকী ছায়াও পড়ছে মাটিতে।
ফলে হাবা
দর্শক এবং গবা রিপোর্টাররা পর্যন্ত জেনে যাচ্ছে–– ময়ূরেরা ধর্মপুত্তুরের ভেকধারীমাত্র।যুদ্ধ ভুলে এরাই নাচতে শুরু করবে জুলাই মাসে, মেঘ দেখলে, পেখম মেলে।
হননপট
ফাল্গুনী পূর্ণিমার রাত,চুনিবুড়ি খালের ওপর ব্রিজটি ভয়েসিঁটিয়ে আছে–– দূরে পায়ের শব্দ,আবছা বিড়ির আলো এগিয়ে আসছে এ-দিকেই!তাই দেখে এমন ঘেউ ঘেউ ডাক দিলাম যে গ্রামসুদ্ধু
সব্বাই সাবধান হয়ে গেল... দিকে দিকে শাঁখ বেঁজে উঠল, হঠাৎ আলোর ঝলকানি আর 'থ্রি-নট-থ্রি'র মতো, আসলে পাইপগানের গুলি
ছুটে এল আমার দিকে…
মর্গে শুয়ে আছি, মৃতের মতো চোখ বন্ধ করে, তলপেটে গুলি,
রক্ত গড়িয়ে পড়ছে মাটিতে–– ক্যামেরার লেন্স জুম
করে এই দৃশ্য তুলছে উন্নয়নশীল দেশের চিত্রসংবাদিকরা।
ম্যাজিক
ঘোড়াটি আড়াই ঘর চালের
উচ্ছ্বাসে
গলাটি উপরে তুলে যেমনি
হ্রেষাধ্বনি করে
অমনি দীর্ঘ এক তরবারি
নেমে এসে
গলাটি ঘচাং ফু কেটে নিল।
পেছনের সাদা পর্দায় ছিটকে
পড়ল রক্ত,
বাচ্চা বুড়ো সকলেই ভয়ে
ঘেমে নেয়ে একাকার হলের
ভেতর।
রঙিন পোশাক পরা এক মেয়ে
এসে
কাটা মুণ্ড ঘোড়াটির লিঙ্গে
হাত রাখতেই
মরা ঘোড়া পুনরায় জ্যান্ত
হয়ে
গলাটি উপরে তুলে পুনরায়
হ্রেষা ধ্বনি করে।
রূপকথা
একদেশে এক রাজা
ছিলেন রাজসভাতে বসে–
রাজার মনে সেই সময়ে
যে-কথা ঝুঁকে পড়ছিল,
পিঠ খোলা তার
বুকের আঁচল মাটিতে লুটিয়ে
কাদা।
সে রাজা বা কেমন!
সে-কথাই-কী!
কিচ্ছু না- কিচ্ছু না-
এক বুড়ি তার ধেড়ে নাতিকে
রূপকথা শোনাচ্ছিল।
সহজিয়া
সহজভাবে দিন গড়িয়ে যায়
রাত্রির দিকে
সহজভাবে হাওয়া বয়ে যায়
উত্তর থেকে দক্ষিণে
সহজভাবে শরীর এগিয়ে যায়
শরীরের দিকে।
আমাদের পুথিগুলি অগ্নিদাহ্য
আমাদের বিদ্যা গুপ্তবিদ্যা
আমাদের ধর্মাচার গুরুমুখী
আমাদের সাধনা কুমারীর
যোনিপীঠে তৃপ্তিলাভ করে
আমাদের আরোগ্য ধনেশ পাখির
তেলে বিশ্বাস রাখে।
'কলির এই শেষপাদে পুরুষের
লিঙ্গই একমাত্র সৎ।
হাস্য লাস্য এবং উপেক্ষা–এই তিন বোন
বাগে পেলে পুরুষের লিঙ্গটিকে
গিলে খেতে চায়,
কামিনীতে দৃষ্টিপাত তাই
অনর্থকারী'–
গুরুদেব বুঝিয়ে বলেন খুব
সহজভাবে।
হাওয়া মোরগেরা দিকনির্ণয়ে
নিয়োজিত হয়ে
নিয়ন্ত্রণ করে জীবনতরীর
গতিবিধি –
সহজভাবে দিন তাই গড়িয়ে
যায় রাত্রির দিকে
সহজভাবে হাওয়া তাই বয়ে
যায় উত্তর থেকে দক্ষিণে।
মাটির তৈজস
মাটির তৈজসগুলি ধিকি ধিকি আগুনে পুড়ে
তুচ্ছ ও ভঙ্গুর দশা থেকে
উত্তীর্ণ হতে চায়।
মহেঞ্জোদরোর পোড়ামাটির
মূর্তিরা
কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে
দেখছে
সময় টিক টিক শব্দে সরে
যাচ্ছে সময়ান্তরে,
বাঁকুড়ার ঘোড়া কান খাড়া
করে শুনছে
শিমুল গাছের নীচে দাঁড়ানো
ছেলেটি
রোগ কালো মেয়েটিকে ভুলাচ্ছে
কীভাবে!
মাটির তৈজসগুলি তুচ্ছ
ও ভঙ্গুর দশা থেকে
উত্তীর্ণ হতে চেয়ে ধিকি
ধিকি আগুনে পোড়ে।
মোট বোধহয় একুশটি কবিতা র সমাহার।।কিছু লেখা অতি সরল গদ্যে।। কিছু অগদ্যে।। সেগুলিও বেশ সোজা।।জটিল দুর্বোধ্য কোনও শব্দ নেই।।।মধ্য আশির কবি বশ্বজিত মাইতি।।তিনি যে বেশশ প্রতিষ্ঠিত সেটা বই এর সংখ্যাতেই প্রমাণিত।।।।।।।।।।।।।।।।।।।
ReplyDeleteএক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। অসাধারণ কবিতা সব। আবার পড়ব। একবারে হবে না। কবিকে আমার শুভেচ্ছা জানাই 💐
ReplyDeleteকবিতাগুলিতে জীবনরস বেশ ঘনীভূত হয়েছে। মিথ-পুরাণের সঙ্গে জীবনযাপনের সামাজিকতাও তির্যক ছায়া ফেলেছে। জীবনকে প্রশ্ন করা যায়, জীবনকে ভালোবাসা যায়, জীবনকে দার্শনিকও করে তোলা যায়। খুব সহজভাবেই কবি দাগ কাটেন, আবার দাগের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা নিজের ছায়াকেও দেখতে পান। এক ঝলকে দুঃখ বিষাদ জয় করে আমরাও কবির সহগামী হয়ে উঠি। মনে মনে বলি :
ReplyDelete"কলির এই শেষপাদে পুরুষের লিঙ্গই একমাত্র সৎ।
হাস্য লাস্য এবং উপেক্ষা–এই তিন বোন
বাগে পেলে পুরুষের লিঙ্গটিকে গিলে খেতে চায়,
কামিনীতে দৃষ্টিপাত তাই অনর্থকারী'–
গুরুদেব বুঝিয়ে বলেন খুব সহজভাবে।" 😍
খুবই ভালো লাগল
ReplyDeleteবিশ্বজিত মাইতি আমার প্রিয় কবিদের একজন। তাঁর এতগুলো কবিতা একসঙ্গে পড়ার সুযোগ পেয়ে আনন্দিত। বেশিরভাগ কবিতা যদিও আগে পড়া ছিল।
ReplyDeleteসুমন, ভালোবাসা।
Deleteবোধের গভীরে পৌঁছে যায়, সুচারু কারুকাজের একুশটি লেখনী।
ReplyDeleteঅদ্ভুত সুন্দর কিছু কবিতা পড়লাম
ReplyDeleteThank you, Aritra Chatterjee
ReplyDeleteভালো লাগলো
ReplyDelete