বাক্‌ ।। সঞ্জীব নিয়োগীর কবিতা

 


  

পরবর্তী শুনানির দিন

 

 

যত কাছে যতি

পাখিরা ইঙ্গিতে জ্বলে

বড় বড় কথাগুলো অনেকটি জায়গা খায় আর

মুখ দ্যাখে জল হাওয়া ছাতা

তোয়াক্কার মখমল উড়ছে ওই দেখ

বিছানার লোলুপ

লঘুপাপ

আসমান জমিন

 

 

শেষ হয়না অনুচ্চার আর লজ্জা...

দাগ লেগে থাকে নির্জন

পালকগুচ্ছ উঠে আসে টুপির হাসিতে

 

একটু নিঃশ্বাস চেপে মানিয়ে নিয়েছ মেঘ

কিছু কিছু কষ্ট ছাড়া এখন তুমি একা

অসময়েও খেতে পারো খুব জটিল একটা চুমু

 

 

যতই ঘুরে ঘুরে দেখো

পথ আর পাথরের মাঝখানে              একটা দেখা

                          মাত্র একবার

সম্পূর্ণ নতুন কিছুই আনতে পারে না

স্তাবক হাসিরা শুধু হাসাহাসি করে

উড়ন্ত শিককাবাবের মায়া

 

সারাদিন কেমন বন্ধুহীন ঘুরে-বেড়ালে ঘেঁটুফুলের অবহেলায়

 

 

 

 

 

ঘুমঘোর সিরিজ

 

তুমি সেই বিবাহ ছেড়েছ

                 বিলি-রোদ্দুর, হয়তো, পথে 

না-মন যেখানে যতটুকু খোলা

                 হাওয়াপ্রান্তর, ধু ধু, পল্লীর চাষজমি

                 এরকম বণর্না বাবদ

                 খুব তুচ্ছ অনলস

                 প্রবাসের অতি

রাখলাম, ইতিহাস, সাতপাকের অতিনাটকীয়

কেটে ফেলবনা আর, বলাটুকু, মান-অভিমানে, সমান্তরাল

বেহিসেবি মধু, চাঁচাছোলা

 

 

কোন ডাক, সারাক্ষণ, ছায়া

 

আলোর ঘাটের কথা

দূরে চলে যাও

খুব টান, মৃত্যুফাঁস, পিছল উপমা

 

রাত-নিটোল, আবার মুঠো খুলছে জাদুদিন

নেশা আসে, হয়, ছড়ানো ছিটানো

 

একরকম জিত, একরকম হার

ছাড়লাম যেসব ঘরদালান, কার উড়োচুল

তোমার আভাষ তো, ওই, নাবালক চিরদিন

 

একটু একটু মন, কুড়িয়ে, যথাযথ

 

হাসার মিথ্যে, যে কোনও দিকে, আজও

 

 

বমিভাব লুকোনো, দরমা-বিদীর্ণ, ননস্টপ

ঝুপ-আঁধার গলি, হাতের, সুযোগে বাজে দ্রুতলয়

 

যা চলে, অভ্যাস, এসো জুড়ে দেওয়া হোক

ডালগুলো ঝুঁকে আছে রমরমা

উদ্যত চাতাল, উদ্ধত কী আকার, সিটি স্ক্যান

 

হোমিও ক্লিনিক, শেষ পথে চনমনে কাহিনি

কতদূর যাবে, বাছা বাছা, কী চাচ্ছ পরিধি

আরও আরও আরও --- এই তো  বেশ চাবুক

পেরেছ, নভশ্চর, এটুকু সিঁদুরে মেঘ, তোলা থাক

বৃন্দগান, খোঁজখবরের ক্ষীণ সেতু

 

স্বপ্নদাম, বীযর্মন্ডিত, বারে বারে ফুলে উঠছে

আমানিপ্রকল্প, গাঁটছড়া, আন্তরিক বোকার ফুলদানি

 

এগোনো কাঁটায়, পাথরের দাগে

আবডালের সরস প্রতিমা, কালাপানি, খাঁ খাঁ

বাজে, ছয়লাপ প্রবাহ

ঠাস-বুনোটের দিকে দিকে কত মনমেঘ, স্লাইট অবেলা

রীতিবাধ্য, জলখসানো পেশি, দুবর্লতার উড়ো

হাওয়া খায়, সামান্য ডিগবাজি, গড়চুড়ি

চুমুভাব লেগে থাকে, হে চূড়া, সাবধান, বিশুষ্ক মঞ্জরী

চিরায়ত, ছলনাপ্রবাহ, নিমরাজি

দেওয়া-নেওয়া হোক, প্রাবন্ধিক নিগূঢ় ধরতাই, চাকা

বহু দাগ, চনমনে সকাল, চিরলিপি

 

ধরা থাকে বিনয়ে, উদ্ধত –

 

 

 

 

রূপকথার আসর

 

বাপ রে কী অবস্থা বলো সেবার ননী পিসি গাঁদাল পাতার বড়া করে দুপুরে রাত্রে সারাক্ষণ কাঠবেড়ালি আর রজনীগন্ধার জপমালা ঘোষ বেজে বেজে নতুন ছোকরারা বেশি কথা বলেনা রাতের রুটি তখন হলো কী তাহলে শোনো পেটের অবস্থা দেখে মালতি তো সন্ধ্যার পর আর বাজি পুড়ছিল বুঝতে পারছ নিশ্চয় ডাঁটা ভাঙা চশমার দোহাই দিতে দিতে পায়ে  পড়ছিলে যারপরনাই টক খেতে ভালো লাগবে এসময় মুড়ি বের করলে গুড়ের পাটালি নকশাল করিসনা বাছা খুদু মাস্টারের মেয়ে রে বাপ বংশ বলে একটা ইয়ে শুনছিস হারামজাদা  মিটিমিটি পুড়ছিলো তারার আকাশ বৃষ্টি-খেকো বুকের অসময়ে নিচু ডাঙা বসতের সাজো সাজো সবই তোমার জানা ভূয়সী চোখের হাসি আর সমর্থন তা যাই বলো তুমি না থাকলে বাপ-মা মরা লোকাল ট্রেনের হাতল ধরে কথার দাম রাখতে পারেনা সব ছেলেখেলার দৌড় সোনার পাথরবাটি এইটুকু একটা দাগ এরকম ভোগাবে জানলে...

 

 

বুঝলেন নারুদা, নদীর সব দিকে জল, চপল কোথায় গেছে পুলিশ ঠিকই জানে। ওই যে পুকুর থেকে বারো ঘড়া মোহর... বারবার বললেই মিথ্যে নাকি বউটাকে লরির কোন ড্রাইভার সিনেমার মতো ছবি দূর থেকে এখন দেখ উজবুক বনকলমির আড়ালে ডাহুকের স্মৃতি ঘর মোছার নেতাটাও যত্নে কাচার ভালবাসা এমনি পাওয়া চোদ্দোআনার এক ঘোলাটে জলাশয়ঃ ক্ষতিপূরণ নিতে যেও আঁচলের খুঁট লুকোনো ব্যবচ্ছেদে কথা ঘুরিওনা চোখের দিকে হাওয়া বইছে অনুকূল তাকানোর বক্ররেখা মোহোরগুলোকে এ.কে.সাতচল্লিশ বলছে ওরা-আমরা হচ্ছে দেখুন না স্যার এখনো আউটারে দাঁড়ানো বিচারের পিত্তি গলে-যাওয়া মাছের স্বাদ পারিষদদের জন্য এত তঞ্চক... চোখের পিঁচুটি মুছে এরকম অসংখ্য দুলুনি ঘুমের মেয়াদ ফুরিয়ে প্রাণদায়ী শিশির বিবাহ আইন পাখিদের সম্মিলিত ফাঁদঃ কিসের সুবাদে কেউ সবকিছু বেঁধে দিচ্ছে শব্দের ডেসিবল থেকে রং...  

 

 

৩ 

পাতা কুড়ুনির ভোজ-সন্ধ্যায় লালসা পুরুষের গুটিগুটি... মুখে একটু বদলের রূপটান চটজলদি হাতাসাফাই করে নাও নারীপুরুষ বিষয়ক তক্কো সারাৎসার, সাতসমুদ্দুর মিথ্যে সঙ্গম পাড়ি, আড়ি-ভাব হাটের খোলামকুচি... অনেক জল খাওয়ার পর উঠে আসবে নিন্দুকের সুরভিমণ্ডিত ভেতর ঘর : সংক্ষিপ্ত আলাপচারিতায় যেন কত কুয়োয় তলিয়ে যাচ্ছে পাশ ফিরতে অপারগ দাবী। ... সারাক্ষণ সমুদ্র বানাচ্ছ অপলক নামের রোদ্দুর; সামান্য পকেটে  চাবি ও হাতছানির বাসনা, একটু আমলকী মুখে কাছে আসার নানাবিধ কৌশল... দিকে দিকে হৃদয় পাটাতন অনুবাদে রাখছ সামনের বনানী, তোমার খেলার পর পড়ে থাকছে অসুরক্ষিত ব্যালটবাক্স, এত ভেতরে ঢুকে কেউ কি উপগত হতে চাইবে; একআধটা নুড়ি দিয়ে কী ছিঁড়বে অথবা থালায় রাখলে নাহয় বিশ্বাস-বহিভূর্ত কামনা উপকরণ। পাইকারি বা খুচরো দুভাবেই তুলতে পারো ছবির ফুটুনি, মনোরম ঠাঁই যেদিকে... 

 

 

৪ 

তড়িৎ জনিত কিছু জানাজানি সুকুমার রোদ-চাদরের ঘরোয়া কাঁটায়। রূপের চৌকাঠ অবসরের উঠোন পেরিয়ে আসতে নূপুর... এটুকুই খালি-পেয়ালার গড়িমসি, ভাদ্রমাস বরাদ্দ করেছ, ইতর প্রবাসেঃ অহরহ আপডেট চাইছ, চিরহরিৎ যুদ্ধ-সামগ্রী জীবনের শৈলী বিজ্ঞান... না চাইতে ছোঁয়া আসে, কার ভাষা কোন মুখে পলিপরতের ফাঁকে মনেপড়া বিরহ অতীত; বেশি টেকসই ধূলিকণা ডানা থেকে অনেক পালকের ব্যথা মুলতুবি রেখেছ কিছু সুদিনের আলো, কান্নার শব্দেরা আসে ধীর পায়ে নিঝুম পাতায়ঃ খুব লঘু দেখা, ছোটো ছোটো ফুলের আকুতি, বারবার থমকানো প্রবাহ, গায়ে গায়ে উঠে যাওয়া দেওয়ালের শীত, ফুরোনো গল্পের গন্ধ নিভের্জাল কামনার দড়ি পথ ভুল করে রাতকানা ইচ্ছের বাইপাসঃ অধুনাবিলুপ্ত হাসি গান অবিকল জানালা দরজায় উঁকি মুখ...জনপদে গুচ্ছ খোলা-পথ, উপেক্ষার নয়নাভিরাম আসা যাওয়া, জল পড়ে পাতায় পাতায় নিবির্কার-

 

 

 

 

 

বাঁকা উঠোনের জ্যামিতি


কাঁদতে ইচ্ছে করে এই কথা আমিও তো চাই

শোনার পতিত জুড়ে কেউ কি থেকেছ
যতিচিহ্নময় চুমু খুব ভেবে বসে আছি একা
কীভাবে ফিরব ঘুমে আচ্ছন্ন মায়ায়
ক্রমে বাড়ে জেগে থাকা সব কথা না বোঝার কোণে ; এই প্রীত চরাচরে আগাছার লাবণ্য যেমন


কটূ দাও, বেঁচেথাকা চাই অসমাপ্ত ঘোরে

দীর্ঘ খেলার পরে আজ এই বীজ চলে আসে
অনাবৃষ্টি হাসি দিয়ে কাটাকুটি জানে ভিন্নতর
আকাশ নামের এক স্বপ্ন দেখি ডুবজলে একক আবেগে; চারাগুলো হাতে হাতে তুলে ধরা হয়
ধরা হয় আর কোনও আশা করা মূলে...

তীব্র মানুষ তার মানে জানে চলে যেতে থেকে
যে কেঁদেছে গান দিয়ে তার জন্য ভাবো পথরেখা
কীভাবে ফিরব ঘুমে পুনরায় ভালবাসা এলে
অথবা অন্য কোনও অর্থ হবে এই রক্তক্ষয়ে
নদী আর কাঁটাতার যেখানে যেমন উদাসীন
সাথেও থাকতে পারে না বলার ইতিবৃত্ত টানা...


মেলার আঙুল টেনে জনহীন পাথরে বসেছি
পাথরে খোদাই করা নতুন পাষান
আগুনে পুড়ছে মেদ অদৃশ্য জ্যামিতি পাঠশেষে
ওই কোণে হাতেগোনা নক্ষত্রের আলো
আজ হোক কাল হোক নিরেট কালোর সহবাসে
কামগন্ধ অনুসারী নাম ডাকা হবে ধীরলয়ে


যেন কেউ কোনও অর্থের রঙ চাপা দিল এইমাত্র
মানের দোহাই দিয়ে টেনে নিল অশেষ অপার
নিল আরও বড়  সম্ভাবনা সুগন্ধী গভীরে
মিলরিক্ত অপরাপর অস্বস্তির বুকে; শুধু একটা বড় গলি বারবার ছুটে আসে রান্নার সুঘ্রাণে
আর বেমালুম ভুলে যায় সিঁড়ির কাহিনি বিনিময়


আনন্দের জায়গা আছে, সাজানো সটান, একটু সবুর সহ সবরকম ফাঁস হওয়া কবিতার পেটে
বাকিটাও করা হবে মুদ্রাদোষ ভুলে; খুব জল পার করে কানকো আর ফুসফুসের দোহাই
ভুলকথা দুদিকে সাজানো হয়েছে জনে জনে
ফুলের সদৃশ তারা মাটিমুখী তুলেনেওয়া জানে


চাওয়া দাও, যেইদিকে হাওয়া বয়ে গেছে
সামান্য আভাস দেয় প্ররোচিত মেঘের গর্জন, শুধু
অনিঃশেষ তালিকা বয়েছ বয়ঃকাল ঘর্ষণের ফুটো
দুটি কথা সেরে নিতে এত দিন আগে চলে এলে
তেমনই এবং হয়তো আরো কিছু ফেলে গেছ যদি কিন্তু অথবা পেরিয়ে; তবু শূন্য করতল জেগে...


তাঁবু ছিল এইখানে এখন ঝড়ের দাগ রেখে
স্মৃতিধার্য্য আলিঙ্গন বেঁকে যাবে হলুদ পাতায়
ছবির আয়না লেখা অপেক্ষায় পড়ে থাকে দেখা
বিশেষ আলোর গায়ে হাত ধরে বসি; মহাশূন্যে জেগে ওঠে অলীক গ্রাফিক্স
বস্তু ধীরে বসে থাকে অচঞ্চল ছায়ার মেলায়। 

 

3 comments:

  1. প্রতিটি সিরিজই চমকিত করে। ভাষার বুনন ও ভাবনার ক্রমবিন্যাস পাঠক হিসেবে মনের জানলায় আলো ফেলে।

    ReplyDelete
  2. চেতনাগুলি যখন ভাষা পায়, দৃষ্টি যখন দৃশ্য পায়, ক্রিয়া যখন সক্রিয় হয় তখন এরকম কবিতা লেখা সম্ভব।প্রসঙ্গ প্রসঙ্গান্তরে চলাচল করতে পারে। লক্ষ্য বহুমুখ সত্তার অন্বয়ে ধাবিত হয়। আমাদের অন্বিত প্রাচুর্যের সন্ধান পেতে থাকি। এরকম কবিতার সামনে দাঁড়িয়েই মনে মনে বলতে থাকি:
    "তাঁবু ছিল এইখানে এখন ঝড়ের দাগ রেখে
    স্মৃতিধার্য্য আলিঙ্গন বেঁকে যাবে হলুদ পাতায়
    ছবির আয়না লেখা অপেক্ষায় পড়ে থাকে দেখা
    বিশেষ আলোর গায়ে হাত ধরে বসি; মহাশূন্যে জেগে ওঠে অলীক গ্রাফিক্স
    বস্তু ধীরে বসে থাকে অচঞ্চল ছায়ার মেলায়। "

    ReplyDelete
  3. Anyarokom ak bhalo laga...

    ReplyDelete